spot_img

৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

শান্তনু বিশ্বাসের সৃজনবিশ্ব

চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গনের উন্মেষকালের অন্যতম মেধাবী সারথি শান্তনু বিশ্বাস (১৯৫৪-২০১৯)। নাটকের সকল ক্ষেত্রে ছিল তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। অভিনয়, নাটক রচনা, নির্দেশনা, সুরারোপ ও সংগীত রচনা এবং সংগঠন পরিচালনা, পত্রিকা সম্পাদনা সকল ক্ষেত্রে তিনি প্রাতিস্বিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নাটককে বলা হয় যৌথশিল্প। এ শিল্পের কর্মীকে সমূহ শিল্পের জ্ঞান থাকা জরুরী। শান্তনু বিশ্বাস শিল্পের সকল শাখার জ্ঞানের অধিকারী হয়ে চট্টগ্রামের নাট্যকর্মীদের কাছে অনুকরণীয় ও আদর্শ আইকন হয়ে উঠেছিলেন।

নাট্যাঙ্গনে শান্তনু বিশ্বাসের আগমন গণায়ন নাট্যসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে (১৯৭৫)। এ সময় তিনি ছিলেন মুলত অভিনেতা। গণায়নের প্রথমদিকের নাট্যপ্রযোজনা ‘গফুর আমেনা সংবাদ’, ‘চর্যাপদের হরিণী’, ‘যায় দিন ফাগুনো দিন’ প্রভৃতি নাটকে তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭৮ সালে ‘অঙ্গন থিয়েটার ইউনিট’ প্রতিষ্ঠিত হলে শান্তনু বিশ্বাস যোগ দেন এ দলে। অঙ্গনে প্রথম তিনি নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এ দলে তার রচিত তিনটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটকগুলো হলো- ‘কালো গোলাপের দেশ’, ‘দপ্তরী রাজদপ্তরে’ ও ‘নবজন্ম’। প্রথম তিনটি মিলন চৌধুরীর নির্দেশনা। ‘নবজন্ম’ নাট্যকার নির্দেশিত নাটক। ১৯৮২ সালে শান্তনু বিশ্বাস নিজেই গড়ে তোলেন নাট্যদল। ‘কালপুরুষ নাট্যসম্প্রদায়’। এখানেই তিনি নিজস্ব নাট্যচিন্তা নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গিতে আত্মপ্রকাশ করেন। কালপুরুষের প্রথম নাটকগুলোতে তিনি মুলত নির্দেশক ও অভিনেতা। এই উভয় ক্ষেত্রে তার সৃজন ক্ষমতার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে নীলকণ্ঠ সেনগুপ্ত রচিত ‘জুলিয়াস সিজারের শেষ সাতদিন’ এবং জর্জ বার্নার্ড শ রচিত ‘ম্যান এন্ড ডেসটেনি’ নাটকের জ্যোতির্ময় নন্দীর অনুবাদ ‘মানুষ ও নিয়তি’ প্রযোজনায়। এসময় তিনি নিমগ্ন হয়ে পড়েন নিবিড় নাট্যচিন্তায়। নবনাট্য আন্দোলনের সম্ভাবনা, সংকট ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করে নাট্যচিন্তক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নিজস্ব ও সম্মিলিত নাট্যভাবনা প্রকাশের জন্য সম্পাদনা করেন নাট্যপত্রিকা। নাট্যচর্চার পাশাপাশি ভিন্নধারার সংগীত শিল্পী হিসেবে শান্তনু বিশ্বাস উভয় বাংলায় সমাদৃত। এই বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক প্রতিভার কর্ম ও সৃজনের চিন্তনে কেন্দ্রে ছিলো দেশ ও মানুষ। মানুষের কল্যাণের কথা আমৃত্যু প্রচার করেছেন। মৃত্যুর পর মানুষের কল্যাণে দেহটিও দান করে গেছেন।
শান্তনু বিশ্বাস গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের উন্মেষকালের কর্মী। এ আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিলো নিজস্বকালের সংকট ও সম্ভাবনাকে মঞ্চালোকে উন্মোচন করা। সে সূত্রে এ কালখ-ে সৃষ্টি হয়েছে মৌলিক নাটকের একটি সমৃদ্ধ ধারা। চট্টগ্রামে এ ধারাকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন শান্তনু বিশ্বাস তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সমকালীন সময় ও সমাজকে তিনি তুলে ধরেছেন নাটকে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা, অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারে তুমুল উত্থান, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধে বিপক্ষীয় শক্তির আস্ফালন আর স্বাধীনতার সপক্ষীয় শক্তির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বিস্তর ব্যবধানজনিত কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ, পরিবার ও নরনারীর সম্পর্ক শান্তনু বিশ্বাসকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছে। এ সব বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন ‘কালো গোলাপের দেশ’, ‘দপ্তরী রাজ দপ্তরে’, ‘নবজন্ম’ ‘ভবঘুরে’, ‘ইনফরমার’, ‘নির্ভার’, ‘মৃণালের চিঠি’ (মূল গল্প: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র’), ‘ক্ষীরের পুতুল’ (মূল গল্প: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর) প্রভৃতি নাটক। বিদেশী নাটকের অনুবাদেও তার পারঙ্গম প্রতিভার পরিচয় মেলে। তার অনুদিত নাটকগুলো হলো- ‘খোলা হাওয়া’ (এন এফ সিম্পসন এর ‘হাউ আর ইউর হ্যান্ডলস), ‘প্রার্থী’ (হ্যারল পিন্টার এর ‘এপ্লিক্যান্ট’) ‘মাতৃচরিত’ (এ্যালেন আইকবোর্ন এর ‘মাদার ফিগার’) প্রভৃতি।
উপর্যুক্ত ছয়টি মৌলিক নাটকের মধ্যে শান্তনু বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্বশীল নাটক ‘ইনফরমার’। নাটকটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাট্যধারায় অনন্য সংযোজন। ‘ইনফরমার’ এর আখ্যান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত। ১৯৮২ সালে নাট্যকার কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে নাটকটি ‘কালপুরুষ’ এর প্রযোজনায় প্রথম মঞ্চস্থ হয়। ‘কালপুরুষ’ কর্তৃক অর্ধ-শতাধিক প্রদর্শনী ছাড়াও একাধিক দল দেশে ও পশ্চিমবঙ্গে নাটকটির শতাধিক মঞ্চায়ন করেছে। নাটকটি সম্পর্কে লেখক বলেন- “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বদলে, তাকে ভুলিয়ে দেবার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছিল তখন। এই নাটক লেখা হয় সেই গুমোট আবহের প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদে।” একারণে ‘কালপুরুষ’ এর প্রযোজনায় ইনফরমারের সুভ্যিনরে লেখা থাকত ‘আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে মনে করিয়ে দেবার নাট্য’। মুক্তিযুদ্ধ শান্তনু বিশ্বাসের প্রিয় অনুষঙ্গ। তাঁর অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে এর চেতনা। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধ যুগপৎ বিপুল আনন্দ অপরিমেয় বেদনার মহাকাব্য। কেননা মুক্তিযুদ্ধে তিনি হারিয়েছেন প্রিয় অগ্রজ অতনু বিশ্বাসকে। গ্রন্থাকারে নাটকটি তিনি অগ্রজকে উৎসর্গ করে লিখেন- ‘আমার দাদা অতনুকে, যে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেনি’। হারানোর এ বেদনাকে তিনি একাকী বহন করেছেন আমৃত্যু- সে সাথে মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি ও দৃপ্ত চেতনাকে তিনি আমৃত্যু লালন করেছেন।
‘ইনফরমার’ নাটকের আখ্যান ট্র্যাজি-কমেডির মিশ্রণ। এর সংলাপ তীক্ষè ও ক্ষুরধার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনাদের বিভিন্ন সংবাদ সরবরাহ করে সহযোগিতা করার জন্য নিয়োগ করা হয় এ দেশজ পাকিস্তানি সহচরদের। তেমনি উদ্দেশ্যে একজন নিয়োগ প্রাপ্ত সংবাদ সরবরাহকারীকে নিয়ে রচিত হয়েছে শান্তনু বিশ্বাসের ‘ইনফরমার’। নাটকে দেখা যায়, শেখ জামান পাকসেনাদের ইনফরমার হিসেবে নিযুক্ত হলেও সে গোপনে কাজ করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সপক্ষে। দুঃসহ পরিণতি অনুমান করেও সে দেশের বিরুদ্ধে যায়নি। ‘ইনফরমার’ নাটকে পাকসেনাদের অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছে জীবন্তভাবে। রমজুর সংলাপে পাই সে চিত্র-‘গেরামে ইজ্জত বাঁচায়ে আর থাকন যাচ্ছে না। মাস্টার, গোটা গেরামটারে আগুনে পুইড়ে দিয়েছে। এক গেরামে আগুন নিবে তো আর এক গেরামে জইলে ওঠে। আগুন আর নিবে না। সব পুইড়ে শেষ।’ পাকসেনাদের এই অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে ইনফরমার শেখ জামান অবলম্বন করে ভিন্ন এক কৌশল। নারী সম্ভোগের প্রলোভন দেখিয়ে পাক অফিসারকে সে নিয়ে আসে গ্রামে। মদ আর সংগীতে নেশাগ্রস্ত করে তাকে হত্যা করে জামান। অবশ্য এর জন্য জামানকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। নাটকের শেষে আমরা লক্ষ্য করি, পাকসেনারা নির্মমভাবে তাকে হত্যা করছে আর অন্যদিকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে স্বদেশ।
নাট্যাঙ্গনে শান্তনু বিশ্বাসের অনন্য অবদান নাট্যপত্রিকা ‘প্রসেনিয়াম’। ১৩৮৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে (মার্চ ১৯৮৩) শান্তনু বিশ্বাসের সম্পাদনায় ৫,জুবিলী রোড, চট্টগ্রাম থেকে তৎ-কর্তৃক প্রকাশিত হয় ‘প্রসেনিয়াম’ ষাণ¥াসিক নাট্যপত্রের প্রথম সংখ্যা। ১৩৯৬ বঙ্গাব্দের জৈষ্ঠ্যমাসে (জুন ১৯৮৮) ষষ্ঠ সংখ্যা প্রকাশের পর ‘প্রসেনিয়াম’-এর যবনিকা পড়ে। পত্রিকাটির প্রধান প্রবণতা ছিল সমকালীন বাংলাদেশের নাট্যচর্চার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ এবং বিশ্বনাট্য ও নাট্যভাবনার সাথে নাট্যকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের বোধের জগতকে সমৃদ্ধ করা। এ লক্ষ্যে ‘প্রসেনিয়াম’-এর প্রতি সংখ্যায় মৌলিক নাটক ও প্রবন্ধের পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে একাধিক বিদেশি নাটক ও প্রবন্ধের অনুবাদ।
প্রসেনিয়ামের প্রতি সংখ্যার দীর্ঘ সম্পাদকীয়তে তার নিবিড় নাট্যচিন্তার পরিচয় মেলে। সম্পাদকীয়গুলোতে চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গনের নানা সংকট ও সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে আবর্তিত হয়েছে তার নাট্যচিন্তা । তাছাড়া চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গন নিয়ে রাজধানীর উন্নাসিকতা ও অবমূল্যায়নের প্রতিও তার ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে বারবার। বলা যায়- প্রসেনিয়ামের সম্পাদকীয়তে শান্তনু বিশ্বাসের নিবিড় নাট্যচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। প্রসেনিয়ামের প্রতি সংখ্যায় মননঋদ্ধ দীর্ঘ সম্পাদকীয় লেখার পাশাপাশি শান্তনু বিশ্বাস রচনা করেছেন অনেকগুলো স্বতন্ত্র প্রবন্ধ। তার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলো হলো- ‘বাকস্ফূর্তি’ ‘নাট্যমঞ্চ সমৃদ্ধ হোক রবীন্দ্রনাট্যচর্চায়’ ‘ব্যক্তি মানসে যৌথ কর্ম’ ‘অভিজ্ঞান’ প্রভৃতি। প্রবন্ধে শান্তনু বিশ্বাসের বক্তব্য অনেক বেশি শাণিত ও বিস্তৃত। সমকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সমকালকে অতিক্রম করে আজকের বাস্তবতায়ও নাট্যকর্মীদের জন্য প্রবন্ধগুলো প্রাসঙ্গিক।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি অভিনয়ের মাধ্যমে এ মহান শিল্পীর আগমন। অভিনয় ছিল তার জীবনের প্রথম প্রেম। আশির দশক পর্যন্ত তিনি ধ্যানমগ্ন ছিলেন অভিনয়ের কারুকর্মে। এরপর অভিনয়ের জগৎ থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। এসময় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন সংগীতের সাধনায়। ভিন্নধারার সংগীত শিল্পী হিসাবে দুই বাংলায় শান্তনু বিশ্বাস সমাদৃত হয়েছেন। তিনি গান গাইতেন নিজের লেখা, নিজের সুরের গান। প্রকাশিত হয়েছে গানের একক ও যৌথ সংকলন ‘পোস্টম্যান’, ‘চিরকুট’, ‘খড়কুটো’, ‘ঝিনুক ঝিনুক মন’, ‘আবহমান’, ‘সব তোমাদের জন্য’ প্রভৃতি এবং গীতিসংকলন ‘খোলাপিঠ’। শান্তনু বিশ্বাস শিল্পের বিবিধ শাখায় পরিভ্রমণ করে জীবনের সর্বশেষ প্রান্তে আবার ফিরে এসেছিলেন যৌবনের প্রথম প্রেমিকার কাছে। অভিনয়ে দীর্ঘ বিরতির পর, মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে নিজের লেখা ও নির্দেশনা ‘নির্ভার’ নাটকে অভিনয় করে জানান দিয়েছিলেন ফিরে আসার। প্রত্যাবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হলো না। হয়তো চলে যাবেন বলেই দেখা দিয়ে গেলেন।
গত ১২ জুলাই চট্টগ্রামের এই বহুমাত্রিক মেধাবী শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৬ সালে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তিনি তার মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেলের এনাটমি বিভাগে দান করার অঙ্গীকার করেছিলেন। ১৪ জুলাই তার সহধর্মিণী ও কন্যাদ্বয় এ মহান শিল্পীর ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মরদেহ মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেন। চট্টগ্রামের এই বহুমাত্রিক প্রতিভাবান শিল্পীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

ভোরে দেখা স্বপ্ন যত / সব যদি আজ সত্যি হত / আকাশ কি আর ঢাকতো মেঘে / এমন সকালবেলায় /রাত্রিবেলা ঘুম রেখেছো কোথায়? / ঘুম রেখেছো লুকিয়ে বুঝি / তোমার চোখের পাতায়..
শেষ স্ট্যাটাস

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss