spot_img

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

কমেনি পেঁয়াজের ঝাঁজ, চাল-তেলেও অস্থিরতা

এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৮২ হাজার টন আমদানি করলেও পেঁয়াজের বাজারে শুরু হওয়া আগুন থামেনি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে নতুন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ শুরু হলে বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা। পেঁয়াজের দাম কমার আগেই এবার চাল ও ভোজ্যতেলের বাজারেও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত মজুত ও পাইকারি পর্যায়ে দাম না বাড়লেও খুচরা বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। কোম্পানিগুলো বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম না বাড়ালেও খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজার ঘুরে ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।

জানতে চাইলে রাজধানীর কোনাপাড়ায় বসবাসকারী মোজাম্মেল হক নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাস শেষে নির্দিষ্ট বেতন পাই। তা দিয়েই পরিকল্পনা মাফিক সংসার চালাতে হয়। এতে সব কিছুর জন্যই নির্দিষ্ট বাজট থাকে। সেখানে কোনও ঘাটতি হলে আমরা তো হিমশিম খাই। সব পরিকল্পনা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষে টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিএসটিআই, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। অযৌক্তিক মুনাফা করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।

সপ্তাহ খানেক পর দাম কমতে পারে পেঁয়াজের

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও দেশি পুরনো পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। গত ২৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে গত ৪৭ দিনে ৮২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। সরকার টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম চালু করেছে। খোলা বাজারে ট্রাক সেলের মাধ্যমে রাজধানীতে এ কার্যক্রম চলছে। প্রথম দিকে ৩৫ টি ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম চালু করলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ৫০ ট্রাক করা হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ পেঁয়াজের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।

পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজী এম এ মাজেদ মনে করেন পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হতে সপ্তাহখানেক লাগতে পারে। তিনি বলেছেন, আসলেই বাজারে পেঁয়াজের কোনও মজুত নাই। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় কমছে না পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহখানেক পর দেশি পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠতে শুরু করলে চাহিদা কমে যাবে এবং বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

সোমবার বিকেলে পেঁয়াজের মজুত পরিস্থিতি জানতে কয়েকজন আমদানিকারককে ডেকে পাঠিয়েছে শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর। গত ১ আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিনমাসে একহাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন এমন ১০জন আমদানিকারককেই ডাকা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম অনেকটাই কমে যেত। স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ হাজার টন আসত। কিন্তু এখন তা সম্পূর্ণ বন্ধ। আর মিয়ানমার সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম। প্লেনে ৮০ থেকে ১০০ টন আসার কথা শুনেছি। এই মূহুর্তে আমদানিকারকদের কাছে কোনও পেঁয়াজ মজুত নাই।

সংকট নেই তবু বাড়ছে চালের দাম

সরকার বলছে দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। উঠতে শুরু করেছে নতুন আমন ধানও। চালের মোকাম বলে খাত দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, জয়পুরহাটে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়েনি। তবু খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চিকনসহ সব ধরণের মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা।

রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের খুচরা বাজারের চাল ব্যবসায়ী সমতা ট্রেডার্সের মালিক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করলেও রবিবার থেকে তা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। মিনিকেট ৪৮ টাকা, ইরি জাতীয় আটাশ নামের মোটা চাল ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দিনাজপুরের চাল ব্যাবসায়ী লোকমান হোসেন বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে তো চালের দাম বাড়েনি। তাহলে রাজধানীর বাজারগুলোয় কেন চালের দাম বেড়েছে, তা আমরা জানি না। এমন পরিস্থিতিতে চালের দাম বৃদ্ধির কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। তিনি এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য সরকারি মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ হাস্কিং রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেছেন, নওগায় চালের কোনও ক্রেতা নাই। ধর্মঘটের কারণে গত ২/৩ দিন ট্রাক চলাচল করেনি। তাই চাল কিনে রাজধানীতে পাঠানোর কোনও উপায় ছিল না।

চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনও অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণির কারসাজি থাকতে পারে বলে মনে করছে সরকার। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশের বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। কেউ কারসাজি না করলে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নাই। কেউ যদি অনৈতিকভাবে চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। এমন অরাজকতা সহ্যও করা হবে না’।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চাল আমদানি নয়, রফতানির কথা চিন্তা করছি। এমন পরিস্থিতিতে চালের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অনৈতিক’।

বাদ গেলো না ভোজ্যতেলও

দাম বাড়ানোর এই সুযোগে বাদ যায়নি ভোজ্যতেলও। গত কয়েক দিনে সারাদেশে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৩ থেকে ৭ টাকা। আমদানি নির্ভর এই নিত্যপণ্যটির চাহিদা বা সরবরাহে কোনও প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। তার পরেও বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।

ভোজ্যতেল কোম্পানি সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা কোম্পানি থেকে কোনও তেলের দাম বাড়াইনি। বোতলজাত সয়াবিনের দাম যেভাবে উল্লেখ করা আছে সেভাবেই বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেভাবেই বিক্রি হচ্ছে। কাজেই খুচরা বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই’।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অমিতাভ চক্রবর্তী বলেছেন, খোলা সয়াবিনের মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা বাজারের খোঁজ-খবর রাখছি। কেউ বোতলজাত সয়াবিন বোতলের গায়ে লেখা দামের বেশি নিচ্ছেন কিনা তা মনিটর করছি। বাকিটা সরকারের দায়িত্ব। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোনও ধরণের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়, বাজার অস্থির করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss