এক সময় ছিলো ফেরিওয়ালা -আজ ফেরিওয়ালাদের চোখে পড়ে না। একদা শীতের সকালে শনশনে ঠান্ডার মধ্যে দূর থেকে খুব পরিচিত ডাক ছিলো ‘ চাই খেজুর রস ‘— শুনেই লেপের তলার আরাম ছেড়ে লোকজন লাফিয়ে উঠতো।
একটু পরেই ফেরিওয়ালা হাঁক দিতো, ‘ চাই মুড়ির চাক, ছোলার চাক, চিড়ের চাক। ‘ ৎ
সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ হলে দেখা যেতো ঘোল – মাখন ফিরিওয়ালাদের। সেই যুগে (১৯৫৮ – ১৯৬৮) আতরওয়ালারা অভিজাত পরিবারে আতর, ফুলেল তেল, গোলাপ ও কেওড়ার নির্যাস ফিরি করতো। এরা কিন্তু বেশি চেঁচামিচি করতো না। তাদের অপূর্ব মধুর গন্ধগুলোই খবর নিয়ে যেতো বাড়ি -বাড়ি তাদের আসার। তখন ছিলো নাকের নোলক ও নখের জুরির জন্য মুক্তো বিক্রেতা, মাথার খোঁপা বাঁধার জন্য ফিতেওয়ালা প্রভৃতি।
কাঁসি বাজাতে বাজাতে আসতো কাঁসার বাসনওয়ালা। আরও আসতো ‘ এক পয়সায় ছখানা দেশলাই ‘ওয়ালা। তেলওয়ালারা এসে বাড়ির মধ্যে ঢুকে হাঁক দিতো, ‘ কেরোসিন তেল ‘, অমনি কাজের লোকরা বোতল নিয়ে আসতো। বইও ফিরি হতো তখন। বর্ণ পরিচয়, রামায়ণ, মহাভারত, সিনেমার গানের বই, কবিতা -ছড়া -উপন্যাসের বই।
আরও পড়ুন:- আজ আমার ৩৪
তখন ছিলো সব কয়লার উনুন। মেয়েরা ফিরি করতো ঝুড়িভর্তি কয়লা।
আসতো বাড়ি – বাড়ি পাউরুটি – বিস্কুটওয়ালা। তবে সবসময় বিক্রেতাদের গলায় ঝোলানো থাকতো পৈতে। তাঁতিনি তো নিত্যদিন চলে আসতো বাড়ির অন্দরমহলে তার পসরা নিয়ে। নাপতিনি এসে বাড়ির মেয়েদের ঝামা দিয়ে পা ঘষে আলতা পরিয়ে দিয়ে যেতো। বিকেলের সূর্য ঢলে পড়ার সংগে সংগে হাওয়ায় ভেসে আসতো অঢেল জলখাবারের ডাক।
যেমন – পাঁটার ঘুঘনি, নকুলদানা, চুরমুর ভাজা, সাড়ে বত্রিশ ভাজা। আজ এসব কোথায়? সব যেনো হারিয়ে গেছে একে একে।
কিন্তু হৃদয় পটে জেগে থাকল ফেরিওয়ালার কন্ঠের সেই মনভুলানো গানখানি – ” এইতো আছে রঙিন ফিতে খোঁপার কাঁটা কানের দুল “।
চস/আজহার