যাদের বিসিএস হয়নি তাদের প্রতি…
১. শুনেছি- গত শতকের ৩০ দশকে আমার নানার এক বন্ধু মুন্সেফ হতে না পেরে অঝোরে কাঁদছিলেন। নানা তখন তাঁকে বলেছিলেন, ‘কাঁদছিস কেন? আল্লাহতালা হয়তো তোর জন্য আরও অনেক ভালো কিছু বরাদ্দ রেখেছেন।’
পরবর্তীকালে নানার সে বন্ধু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।
২. চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ষাটের দশকের শেষের দিকে এসএসসিতে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তার স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে দু’জন সচিব ও একজন রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেই বসেননি। ব্যবসায় হাত দিয়েছিলেন। এখন তিনি দেশবরেণ্য ব্যবসায়ী এবং সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সুনাম আছে। সমাজে তাঁর বন্ধুরা যেমন সম্মানিত, ঠিক তেমনি তিনিও সম্মানিত।
৩. আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা দু’জন ব্যাচমেইট বিসিএস দেয়নি, তাঁরা এখন দুটো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
৪. আমাদের স্কুলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ছাত্র ছিলেন কয়েক বছরের সিনিয়র এক ভাই। তাঁর বিসিএস হয়নি। তিনি এখন ইয়োরোপের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার। আরেকজন প্রকৌশলী চাকরির পরীক্ষাই দেননি, কর্পোরেট জগতে খুবই সম্মানের সাথে কাজ করছেন।
৫. আরেক সেরা বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নারায়ণগঞ্জে শবমেহের নামে এক নির্যাতিত তরুণীর মৃত্যু ঘটলে আর সব বাদ দিয়ে এ ধরনের দুঃখী নারীদের নিয়ে কাজ করা শুরু করে। এখন দেশ-বিদেশে সে যে সম্মান পায়, তা অনেকেই পান না। একবার পশ্চিমা দেশের এক এয়ারপোর্টে তাকে রুক্ষভাবে কেন সে সেখানে গিয়েছে জিজ্ঞেস করলে বন্ধুটি উত্তর দিয়েছিল, ‘তোমার হাতে যে চিঠি দিয়েছি তাতে বলা আছে- কেন এসেছি। তোমার পছন্দ না হলে ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত যাব। আমি নিজের ইচ্ছেয় তোমাদের দেশে আসিনি, তোমার দেশের লোকজন কাকুতি-মিনতি করার কারণে এসেছি।’
এরকম মাথা উঁচু মানুষ আমরা কজন দেখতে পাই?
বিসিএস অবশ্যই ভালো একটি গন্তব্য, তবে একমাত্র গন্তব্য নয়। আমি নিজেও এটা পাস করে চাকরি করছি, তারপরও বলব, বিসিএস ছাড়াও আরো অনেক কিছু করার আছে, তাই এটা না হলে সব শেষ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এতে না টেকা মানে জীবনের রাস্তা শেষ হয়ে যাওয়া নয়।
(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহ করা হয়েছে লেখাটি)
লেখক: কথাসাহিত্যিক
চস/আজহার