আজ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আওয়ামী লীগ
স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ ২৩ জুন, আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম হয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই দলটির। টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি জাতি গঠনের প্রতিটি সোপানে-স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। একটি আদর্শ- উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে ১৯৭১ সালে।

ads here

৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগে নেমে আসে দুর্যোগ। দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে বৃহত্তম এই সংগঠনটি। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে দল গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়ান। আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেন পুনরায়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২০০১ সালে ভোটে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। শুরু হয় বিএনপি জামাত জোটের অত্যাচার নির্যাতন। তবু দমে যাননি আওয়ামী লীগ প্রধান। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পুরে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে কারামুক্ত হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছেন তিনি।

সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠার পর ‘মুসলিম’ শব্দটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আপত্তি উঠে। তাই ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। মুক্তি সংগ্রামের সময়ে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ দুইটি বাদ পড়ে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। নির্বাচনি প্রতীক নৌকা হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে।

দেশের অন্যতম প্রাচীন এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এবার করোনাভাইরাসের সকল কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্তভাবে পালন করা হবে। দলটির দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার সূর্যোদয়ের সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত থাকবেন।

আরো পড়ুন: ঢাকায় ৭১, চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য দলীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা জানাবেন। এতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান নেতৃত্ব দেবেন।

চস/স

ads here