বিদেশগামী কর্মীদের করোনার টিকা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা এক-আধ মাসের মধ্যে সুরাহা হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক সৌদি আরবে হোটেল কোয়ারেন্টাইন খরচ বাবদ বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে এমন প্রত্যাশার কথা জানান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক সৌদি প্রবাসীদের হোটেল কোয়ারেন্টাইন খরচ বাবদ ২০ জনের হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সদিচ্ছার অভাব নেই। আমরা কাজ করছি। সিস্টেম তো একটু লম্বা। সবকিছু করতে গেলে একটু সময় লেগে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে টিকার সমাধান হয়ে যাবে।’
সৌদি প্রবাসীদের টিকা পাওয়ার বিষয়ে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী ইমরান বলেন, ‘সৌদি চাইনিজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে রাজি না। আমরা কিন্তু এরমধ্যে এটা নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি এটা নিয়ে সৌদিতে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি, গতকালও কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করছি সৌদি যেন চাইনিজ ভ্যাকসিনটা গ্রহণ করে। এটাতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন প্রাপ্ত।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রবাসগামীদের যে সমস্যা, এটার সমাধান দিতে পারে এক টিকা, সেটা হলো জনসন অ্যান্ড জনসন। এটার এক ডোজ নিলেই চলবে। এটার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যদি জনসন অ্যান্ড জনসনটা আনা যায়। আমরা এটাও বলেছি, প্রয়োজনে খরচ যদি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে দিতে হয় আমরা সেটা দিতে রাজি আছি। যেহেতু এটা আমাদের প্রবাসীদের কল্যাণে, তাই আমরা সব কিছু করতে রাজি আছি।’
সৌদি আরব ও কুয়েত বলেছে ফাইজারের বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার একটা ডোজ নিয়ে গেলে তারা ওখানে বাকি একটা ডোজ দিয়ে দেবে বলেও জানান মন্ত্রী।
ইমরান আহমদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নীচে অনেক মানুষ টিকার জন্য ভিড় করেছে। আমি নিজে দেখে এলাম, তাদের সঙ্গে কথা বলে এলাম। তারা অনেকেই নোয়াখালী কুমিল্লাসহ দেশের অনেক প্রান্ত থেকে কষ্ট করে এসেছেন। তাদের তো এখানে আসার কথা ছিল না। কিন্তু এটা দায়িত্বহীনতা বলেন আর যাই বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন একটি সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে যে ভ্যাকসিনের জন্য মন্ত্রণালয় যেতে। মন্ত্রণালয় কিন্তু এই ধরনের কোনো সার্কুলার দেয়নি।’
উনি সেটা কীভাবে দেন প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, আর এটার ভিত্তিতে সবদিকে ছড়িয়ে গেছে টিকার জন্য মন্ত্রণালয় আসতে হবে। এটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার। আমি জানি না ওইখানে সিভিল সার্জন সাহেব কীভাবে থাকেন। গতকাল ইস্যু করা হয়েছে আজকে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত ছিল।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে টিকার জন্য জড়ো হওয়াদের সিভিল সার্জনরা ভুল পথে পরিচালিত করায় উষ্মা প্রকাশ করেন ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, ‘টিকার বিষয়ে প্রবাসীদের ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ লকডাউনের মধ্যে কষ্ট করে যে হাজির হয়েছেন এটার দায়িত্ব উনাদের নিতে হবে। আমার মনে হয় সিভিল সার্জনদের মধ্যে যারা এ কাজ করেছেন তাদের এটার দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
এদিকে বিদেশগামী কর্মীরা আগামী সপ্তাহ থেকে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন শুরু করতে পারবেন বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন।
একই অনুষ্ঠানে সচিব জানান, যে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই তারা পাসপোর্টের কপি অথবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমআইটি) কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
২০ বছরের ওপরে সকল প্রবাসী টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে বলেও জানান সচিব মনিরুছ সালেহীন। তিনি আরও বলেন, দেশে ফাইজারের যে টিকা রয়েছে তার থেকে প্রবাসীদের জন্য কিছু টিকা নেওয়া যায় কি না তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
এদিকে আজ সকাল ১০টা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে যারা ভিড় করছেন তারা বলছেন যে, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও টিকা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না তারা।
এছাড়া সৌদি আরব ও কুয়েতগামীদের অনেকে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করলেও চীনের সিনোফার্মের যে টিকা তাদের দেওয়া হবে তা গ্রহণ করার বিষয়ে এখনও কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি দেশগুলো।
চস/আজহার