জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি চক্রের আরও ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামসহ ৫ জেলায় অভিযান চালিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি চক্রের তিন হ্যাকারসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরারিজম ইউনিট।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- হাটহাজারী থানার সরকারহাট এলাকার মৃত নুর আলমের ছেলে মো. সাগর আহমেদ জোভান (২৩), নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার দিঘুলিয়া ইউপির কুমড়ি এলাকার শেখ ওয়াহিদুরজামানের ছেলে শেখ সেজান (২৩), কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার জগৎপুর এলাকার মুখলেছুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান (২৩), সিরাজগঞ্জ থানার রায়গঞ্জ থানার মো. আব্দুল হামিদের ছেলে মো. শাকিল হোসেন (২৩) এবং ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার সিংহেশ্বর ইউপির মো. আব্দুল জলিলের ছেলে মো. মাসুদ রানা (২৭)।

ads here

১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নগরীর দামপাড়াস্থ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের নীচতলায় পিআর কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট চট্টগ্রামের ডিসি লিয়াকত আলী খান।

তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে নগরীর বন্দর, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা ও খুলশী, দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় কাউন্সিলর অফিসের সার্ভারে প্রবেশ করে ৭৮২টি ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে হ্যাকাররা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় কাউন্সিলর অফিস থেকে জিডি করা হয়। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে কাউন্টার টেরোরিজম। তদন্তে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি কাজে জড়িত একাধিক চক্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার জহির আলম, মোস্তাকিম নামে দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে সাগর আহমেদ জোভানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে নড়াইল জেলার লোহাগাড় থানা থেকে হ্যাকার শেখ সেজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার মালিকানাধীন ‘আদনান কম্পিউটার এন্ড স্টুডিও’ নামে একটি দোকান থেকে জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কলাবাগান থানা এলাকা থেকে মেহেদী হাসানকে জাল জাল জন্মনিবন্ধন সনদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্মনিবন্ধন অফিসের অফিসিয়াল সীল, অফিসের প্যাডসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানা এলাকা থেকে হ্যাকার মো. শাকিল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইসঙ্গে শাকিলের দেওয়া তথ্যে গাজীপুর জেলার বাসন থানা এলাকা থেকে আরেক হ্যাকার মো. মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকেও জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গত দুইদিন ধরে চট্টগ্রাম নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে টানা বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত দুটি সিপিইউ, দুটি মনিটর, তিনটি ল্যাপটপ, একটি ট্যাব, একটি প্রিন্টার এবং ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা জানায়, প্রতিটি ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করতে তারা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা নিয়ে থাকে। অর্থ নেয়া ব্যক্তির তথ্য দিয়ে সরকারের জন্মনিবন্ধন ওয়বেসাইটে প্রবেশ করে ওই ব্যক্তির ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রাথমিক নিবন্ধন করে। এসব তথ্য একজন তথাকথিত হ্যাকারকে প্রদান করা হয়। ওই হ্যাকার অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সার্ভার এ প্রবেশ করে একটি জাল জন্ম সনদ প্রস্তুত করে পুনরায় চক্রের এ সদস্যদের পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে তারাসহ আরও একাধিক গ্রুপ দেশব্যাপী জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত তারা জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনসহ, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বাগেরহাট, নরসিংদী জেলায় অসংখ্য জন্ম নিবন্ধন সনদ সৃজন করেছে।

চস/স

ads here