এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: কোন গাড়ির কত টোল?

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: কোন গাড়ির কত টোল?
দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে কাওলায় এক্সপ্রেসওয়ের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন তিনি।

আজ রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে সাধারণ যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।

ads here

এই এক্সপ্রেসওয়েতে চলতে দিতে হবে টোল। গাড়িভেদে নির্দিষ্ট অংকের টোল পরিশোধ করতে হবে।

চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (তিন টনের কম) ৮০ টাকা; সবধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা; মাঝারি ধরনের ট্রাকের (ছয় চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে ভ্যাটও অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ২-৩ চাকার যানবাহন, পথচারী চলাচল এবং এক্সপ্রেসওয়ের উপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং উঠানামার র‌্যাম্পের জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিলোমিটার রাখতে হবে। নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে নির্ধারিত স্থানগুলো থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠা-নামা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

শনিবার থেকেই এ টোলহার কার্যকর হয়েছে। নির্ধারিত অংশের যেকোনো স্থানে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে এ টোলহার প্রযোজ্য হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের টোলহার আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চালুর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করা হচ্ছে, সেখানে ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্টে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরনিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এই ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানী অংশে দুটি র‌্যাম্প বন্ধ থাকবে। বাকি ১৩টি র‌্যাম্প দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পারবে। তবে যেসব স্থানে গাড়ি নামবে, সেসব পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুয়েটের শিক্ষক গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ওইসব পয়েন্টের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। নইলে যানজট নিরসনের লক্ষ্য পূরণ হবে না। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের আশা, প্রথম ধাপের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারবে। যদিও ওই সংখ্যক গাড়ি এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কাওলা, কুড়িল, বানানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে কতুবপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ৩১টি র‌্যাম্প থাকছে। এসব র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট এড়িয়ে সহজেই নগরবাসী ঢাকার বাইরে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

চস/স

ads here