বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলের সব ধরনের আমদানি শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে এ তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, “আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক মাস ধরে বাড়তি দাম থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তারপরেও আমরা বিভিন্ন রকম শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি।”
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, চিনি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক এবং অগ্রিম শুল্ক রয়েছে। দুটোই প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট ও অগ্রিম শুল্ক রয়েছে, এক্ষেত্রে অগ্রিম শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।
সচিব জানান, পেঁয়াজের শুল্ক চার মাসের জন্য প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, “গত বছর চার মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এনবিআরের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক মনে হয়েছে। আশা করছি এবারও তিন মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।”
দেশের বাজারে পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত কিছুদিন ধরেই বাড়তি।
দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিকেজি ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বেসরকারি যোগান থেকে আসা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
দেশি পেঁয়াজ চড়ছে, অন্য পণ্যের দামও বাড়তি
বাণিজ্য সচিব বলেন, “দেখা গেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে সেখানকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে, সেটার প্রভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
“কিছু ভারতের দাম বাড়ার জন্য এবং কিছু দাম বাড়ার আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এনবিআরকে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরও দুটি দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।”
অনু্ষ্ঠানে বলা হয়, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৮০ শতাংশ এখন দেশেই উৎপাদিত হয়, বাকি ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এর বেশিরভাগটা আসে ভারত থেকে, মিয়ানমার থেকেও কিছু আসে। ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনা হয়েছে।
নভেম্বরের শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, “৫ লাখ টন পেঁয়াজের মজুদ আছে। এই পেঁয়াজ দিয়ে আগামী তিন মাস চলে যাওয়ার কথা। এর বাইরে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে নতুন পেঁয়াজ আসবে।
“এর আগের একটি মাস হয়ত পেঁয়াজের দাম বেশি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের চেষ্টা থাকবে যৌক্তিক মূল্য যতটুকু বাড়া দরকার ততটুকুই যেন বাড়ে, এর মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি এখন যেমন আছে এর চেয়ে আর খারাপ হবে না। তবে এখনকার এই নাজুক পরিস্থিতিটি হয়তো আগামী এক মাস ধরে চলবে।”
চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, “তেলের বাজার স্বাভাবিক আছে। তবে চিনির দাম যেহেতু ৪/৫ টাকা কমিয়ে আনা হয়েছিল তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন।”
চস/স