spot_img

৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলা, মেলা শুরু ২৪ এপ্রিল

‘আবদুল জব্বারের বলীখেলা’ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকার। আগামী ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ৩টায় নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে অনু্ষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যের এই খেলা। জব্বারের বলীখেলার এটি ১১৫তম আসর।

বলীখেলাকে ঘিরে নগরের লালদীঘি মাঠের আশপাশে বসবে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। আগামী ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল (বুধবার থেকে শুক্রবার) এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

এ উপলক্ষে গত ১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয় সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বলীখেলার জন্য লালদীঘি মাঠে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে পাঁচটি ধাপে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রথম বাছাইয়ের পরের রাউন্ড পর্বে ৫০ জনকে নিয়ে খেলা হয়। সেখান থেকে ২৫ জন যান মূল চ্যাম্পিয়ন পর্বে। এখানে কোনো পয়েন্ট ব্যবস্থা নেই। কুস্তি করতে করতে মাটিতে যার পিঠ যে লাগাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। প্রতিবছর ১০০ থেকে ১৫০ জন বলী দূর-দূরান্ত থেকে এসে খেলায় অংশ নেয়।

জানা যায়, ১০৩ বছর আগে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তি’ বলীখেলা নামে পরিচিতি।

বাঙালি সংস্কৃতি এবং একইসঙ্গে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আবদুল জব্বার সওদাগর এ বলিখেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার সওদাগরকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামিদামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।

জব্বারের বলীখেলা ও মেলাকে ঘিরে নগরজুড়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। নগরবাসীর মনে দেখা দেয় বাড়তি আনন্দ। দূর-দূরান্ত থেকে বলিখেলা দেখতে ও মেলায় ঘুরতে আসে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তীব্র গরম ও ভিড় উপেক্ষা করে সবাই ঘুরে বেড়ায়দন মেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তবে নারীরা ঐতিহ্যের বলীখেলা উপভোগ করা থেকে প্রতিবছরই বঞ্চিত হন। কারণ তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করে না আয়োজক কমিটি।

নগরের আন্দরকিল্লা, বক্সিরহাট, লালদীঘি পাড়, কেসিদে রোড, সিনেমা প্যালেস, শহীদ মিনার সড়ক, কোতোয়ালী মোড়, জেল রোডসহ প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে এ মেলা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে নানান পসরা নিয়ে মেলায় আসেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যবসায়ীরা।

যোগাযোগ করা হলে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী গণমাধ্যমকে বলেন, ২৫ এপ্রিল দুপুর ৩টায় লালদীঘি মাঠে বলীখেলা এবং ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বলীখেলার ১১৫তম আসর এটি। সংবাদ সম্মলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, আমরা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। ২২ এপ্রিল বলীখেলার মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি হোল্ডিংসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মো. তানভীর। ইতিমধ্যে আমরা তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর কারণে দুবছর (২০২০ ও ২০২১) জব্বারের বলীখেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। ১১৪তম আসরে কুমিল্লার মো. শাহজালাল বলী চ্যাম্পিয়ন হন। মাত্র ১ মিনিটে শাহজালালের কাছে হার মানেন আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss