বর্তমানে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৬টি বলে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। আরও যাচাইয়ের পর নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গ্রীন রোডে পানি ভবনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণ’ বিষয়ক অবহিতকরণ সেমিনারে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েরর উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশেই নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি পর্যায়ে এখনও নির্ভুলভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবের সঙ্গে নদী কমিশনের হিসাব, আবার এই দুই সংস্থার সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মেলে না।
দখল-দূষণে অনেক নদী এখন বিলীন; যেগুলো খাতা-কলমেও আর সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। যা নিয়ে নদী গবেষক ও নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা দীর্ঘদিন কথা বলে আসছেন; গণমাধ্যমেও উঠে আসছে নদী নিয়ে অবহেলার নানা তথ্য।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের একমাস পর দেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দুই মাসের মধ্যে নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো, বিআইডব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়।
সেমিনারে জানানো হয়, বিভাগীয় কমিশনারদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী নদ-নদীর সংখ্যা ১৪৮০টি। অধিকতর যাচাইয়ের পর সারা দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১১৫৬টি। বিভাগ-ওয়ারী এক বা একাধিক জেলায় প্রবাহিত নদ-নদী বিবেচনায় ৮টি বিভাগে মোট নদ-নদীর সংখ্যা ১১৯৬টি। একাধিক জেলায় প্রবাহিত নদ-নদীর সংখ্যা ১৭৯।
আরও জানানো হয়, ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তালিকায় নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ১০০৮টি। ওই তালিকা থেকে ২২৪টি নদী মাঠ পর্যায় থেকে বর্তমান তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। ২০১১ সালে বাপাউবো কর্তৃক প্রকাশিত ৪০৫টি নদীর মধ্যে ১৮টি নদী মাঠ পর্যায় থেকে বর্তমান তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। এক বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর সংখ্যা ১১২৩টি। দুই বিভাগে ২৭টি, তিন বিভাগে ৪টি, চার বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর সংখ্যা দুইটি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, জেলা প্রশাসকগণ কর্তৃক পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি, জেলা নদী রক্ষা কমিটি, সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান, বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, এনজিও, মিডিয়া, নদী বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকলের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার নদীর তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। বিভাগীয় কমিশনার ও সচিব পর্যায়ে ফলোআপ সভা অনুষ্ঠান এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক ছক প্রণয়ন ও কমিটি গঠন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভাগভিত্তিক ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তিনি জানান, সকল বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক ডিসিদের তালিকা সমন্বিত করে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করে স্ব স্ব বিভাগের নদীর তালিকা প্রণয়নপূর্বক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও নদী রক্ষা কমিশনে প্রেরণ করে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক পাসম, বাপাউবো, বিআইডব্লিউটিএ ও সিইজিআইএস এর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে জেলা ও বিভাগওয়ারী নদ-নদীর তালিকা যাচাইপূর্বক খসড়া স্টেকহোল্ডারগণের মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হলো। সূত্র: বার্তা২৪
চস/স