spot_img

১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্বাভাবিক

করোনা থাবায় টালমাটাল গোটা বিশ্ব, যার পরিপূর্ণ প্রভাব পড়েছে কমবেশ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে।বিশেষ করে অর্থনীতিতে যার প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। লকডাউন বা বিধিনিষেধের কারণে সাধারণ মানুষের এমনিতেই কষ্টে সীমা নেই। এ কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। চালের পাশাপাশি ডাল, আটা, চিনি, তরকারি, মাছ, মাংসের সহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দরিদ্র, খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে।বিশেষ করেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কৃষক পর্যায় এই সকল পণ্য মূল্য কেমন?মজার বিষয় হচ্ছে কৃষক পর্যায় বেশীর সবজি অর্থাৎ পচনশীল পণ্যের মূল্য দুইয়ের ঘর পার হতে পারে না।অর্থাৎ বেশীরভাগ পণ্যের মূল্য ১০ টাকার বেশী নয়।অনেক ক্ষেত্রে কৃষককে পুজি উঠাতে হিমসিম খেতে হয়।এর একটি বড় কারন রয়েছে।কৃষক পর্যায় কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষকদের অনেকটা বাধ্য হয়ে পণ্য কম দামে ছেড়ে দিতে হয়।যেহেতু মৌসুমী ফসল গুলো সবার একসাথে আসে তাই মৌসুমে পণ্যের দাম থাকে খুব কম।অথচ বড় বড় ব্যবসায়ীরা অধিক পরিমান পণ্য হিমাগারে সংরক্ষন করে মৌসুম শেষ হবার পর অধিক দামে বিক্রি করে।ফলে দেখা যায় ফসল উৎপাদন করা কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয় অথচ ব্যবসায়ীরা হয় লাভবান।তাহলে বুঝাই যাচ্ছে কৃষকদের অবস্থা কতটা শোচনীয়।তারা মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে খাদ্য উৎপন্ন করে প্রাপ্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়।অথচ মুনাফা লোভী কিছু বিপদগামী ব্যবসায়ী কৃষকদের বঞ্চিত করে নিজেরা অধিক অর্থ হাতিয়ে নেয়।

সম্প্রতি টেলিভিশন একটি প্রতিবেদন লক্ষ করলাম।প্রতিবেদক খুব সুন্দর ভাবে দেখানোর চেষ্টা করলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বোঝাই ট্রাকের রাতের চিত্র।প্রতিটি স্তরে স্তরে কমিশন দিনে ট্রাককে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।টাকা না ফেলে ট্রাক ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।ফলে যখন পণ্য পরিবহণে অধিক অর্থ ব্যায় করতে হচ্ছে তাই ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক ভাবেই ওই অর্থ সাধারণ মানুষের উপর চাপায়।ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ। অনেক ক্ষেত্রে তিনগুণ ও বেশী।তাছাড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটতো রয়েছেই।প্রতিনিয়ত কিছু মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী টাকার লোভে পড়ে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।যার পরিপূর্ণ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর।

প্রশাসন থেকে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মত দাম নির্ধারণ করে সাধারণ মানুষের সাথে চরম প্রতারণা করছে।এখনি সময় সরকারকে এই ব্যাপারে নজর দিতে হবে।সরকারকে এ অসাধু ও অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাজারে মনিটরিং বাড়ানো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী অসৎ ও অনৈতিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তাদের কাছ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শুধু জরিমানা আদায় নয়, তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের মতো ব্যবস্থাও নিতে হবে।সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে।

বাজারে দোকানের সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং দায়িত্বশীলতার পরিচিত দিতে হবে।কোথাও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশী দামে পণ্য বিক্রয় করলে সাথে সাথে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হবে,এবং প্রশাসন ও এই ব্যাপার জোর তৎপরতা চালাতে হবে। এসবের পাশাপাশি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত ও সরবরাহ বাড়াতে হবে, যাতে করে কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি না হয়। ব্যবসায়ী সমাজকে অসাধুতা এবং অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশা পরিহার করে সঠিক ও সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

সরকারের কঠোরতা এবং ব্যবসায়ীদের সচেতনতা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এতে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে।কিন্তু টিসিবির পণ্য সর্বদাই শহর মুখী।গ্রামীণ পর্যায় যার কোনো পদচারণা নেই বল্লেই চলে।অথচ বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশীরভাগ গ্রামে বাস করে।তাই গ্রামীণ পর্যায় টিসিবির পণ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যদি নাগালের মধ্যে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হ্রাস পাবে।তাই সাধারণ মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সুলভ মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

মোহাম্মদ নাদের হোসেন ভূঁইয়া
শিক্ষার্থী-জয়নাল হাজারী কলেজ,ফেনী
ইমেইলঃhnaderhossain@gmail.com

 

 

 

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss