এই পৃথিবীতে যত কিছু বিচরণ করে সবকিছুর দুইটি দিক দেখা যায়। ইংরেজিতে যাকে বলে positive or negative side। পৃথিবীতে যত উত্তান পতন হয় যত পর্যায় অতিবাহিত হয় সবকিছু এক শ্রেণির কাছে আনন্দের হলেও অন্য আর এক শ্রণির কাছে দুঃখ দূর্দশা ছাড়া কিছুই নয়। শ্রেণি ভিত্তিতে উপভোগের পর্যায়টা ও যেন আলাদা। হেমন্তের শেষের দিকে যখন হিমালয়ের ঠান্ডা হাওয়া ঘায়ে লাগে তখন পুরো শরীরে কেমন জানি কাপোনি শুরু হয়ে যায়। দুই হাত বুকে নিয়ে দু-চোখ বন্ধ করে উপভোগ করি সেই ঠান্ডা হাওয়া। বিকাল বেলা এক কাপ চা হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে যখন গরম চায়ের কাপে চুমুক দিই আহ! কি অসাধারণ। ঠান্ডা হাওয়া আর গরম চায়ের সংমিশ্রণে পুরো শরীর ঝাকোনি দিয়ে উঠে। যখন শীত আসে সকাল বেলা কম্বলের নিচ থেকে বের হতে মনে চায় না কারো। আবার মাঝে মাঝে সেই ঘন কুয়াশাকে ঠেলে বের হয়ে যাই শীত উপভোগ করার জন্য। ঘন কুয়াশা যত যাই তত কুয়াশায় ডুবে যায়। কুয়াশা বেদ করে গিয়ে পিছনে তাকালে মনে হয় আমি যেন কোথাও হারিয়ে গেছি। টিপটিপ করে গায়ে পড়তে থাকে শিশির বিন্দু গুলো। চোখ বন্ধ করে উপর দিকে হয়ে থাকি তখন শিশির বিন্দু গুলো চোখের উপর দিয়ে বেয়ে ঠোঁট পর্যন্ত চলে আসে। মাঝে মাঝে সব বন্ধুরা মিলে খালি মাঠে আগুন জ্বালিয়ে পার্টিও করি। আর ভাবি সবসময় শীত থাকতে পারে না। আমার কাছে শীত যেন উপভোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকে যাই, সবাই কি আমার মত করে শীত উপভোগ করে? হয়তো বা না। গত সপ্তাহে যখন ভ্রমণ করার জন্য ঢাকা যাই তখন কমলাপুর নামি আমরা। কমলাপুর স্টেশনে নেমে দেখি স্টেশনের পাশে সারি সারি প্লাস্টিক মোড়ানো ঘর।সকাল আটটা বাজে সূর্যের কোন দেখা নেই। শিশু, বৃদ্ধ,যুবক-যুবতী সবার চেহেরা কেমন জানি ফ্যাকাশে। কি যেন একটা ছাপা দিয়ে আছে তাদের মন। কিছু একটার অপেক্ষায় যেন তারা অধীর আগ্রহে বসে আছে। কেউ আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে, কেউ দুই হাত বুকে নিয়ে বসে আছে, কেউ আবার মায়ের আঁচলের নিচে। কারো গায়ে জামা আছে কারও নেই।
এই শৈত প্রবাহে যেখানে আমি সকালে কম্বল থেকে বের হইনা। গরম পানি ছাড়া পানি ধরি না।খাবার গরম না থাকলে খাই না। কোথাও বের হতে হলে একটার উপর তিন চারটা জামা পড়ি সেখানে বস্তির মানুষ গুলা কেমন করে পার করছে তাদের জীবন? তাদের নাই জামা, নাই কম্বল, নাই গরম পানির ব্যবস্তা। তারা কিভাবে পার করছে এই শৈত প্রবাহ? কেমন করে এই শৈত প্রবাহ থেকে বাঁচবে তারা? তারা কি আমাদের মতো শীত উপভোগ করে? শীতের এই মৌসুমে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে এমন হাজারো প্রশ্ন উঠে আসে আমার মনে। সত্যি সবাই শীত উপভোগ করতে পারে না। কারো কারো জন্য শীত একটা অভিশাপও বটে।
নাজমা নূর
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ।