বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। পৃথিবীতে যতগুলো স্বাধীন দেশ আছে তন্মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অবিস্মরনীয়। বহু আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। কত নির্যাতন, কত অবহেলিত, কত লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে এদেশের জনগণ তার কোন ইয়াত্তা নেই। বুক ভরা আশা নিয়ে এ দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করার পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এদেশ আমরা স্বাধীন দেশ হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কোন কিছু করতে পেরেছি বা পারি? স্বাধীনতা হচ্ছে মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়ানোর মতো। যেমন একটি পাখি উড়ে বেড়ায় মুক্ত আকাশে। আর উড়ে বেড়ায় ঘুড়ি। তারা তাদের নিজের মত করে উড়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে থাকে না কোন বাধা বিপত্তি। তেমনি আমাদেরও স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে পারাটাই হচ্ছে স্বাধীনতা। কিন্তু আদৌ কি আমরা স্বাধীনভাবে উড়তে পারি?
স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি নিজের চিন্তা-চেতনা বা মতপ্রকাশে কোন সংকোচ থাকবে না। থাকবে না কোন বাধা। নিজের মন যা বলে তখনই তা করাটাই হচ্ছে স্বাধীনতা। বাস্তব অর্থে বিষয়টি একদম ভিন্ন। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর পূর্ণ হয়েছে গেল বছরে। স্বাধীনতার এত বছর হয়ে গেল কিন্তু আমরা কি প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হতে পেরেছি? আজ আমরা স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারিনা। স্বাধীনভাবে কোন মত প্রকাশ করতে পারিনা। কোন কিছু বলতে গেলে নিজেকে আগে প্রশ্ন করতে হয়। আমি কি মত প্রকাশ করবো? না কি করবো না? কারণ কিছু বললেই নিজেকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হয়। বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাহলে কোথায় আমাদের স্বাধীনতা?
শুধু সাধারণ জনগণ নয় বরং আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীনভাবে কোন কিছু করতে পারেনা। কোন প্রেক্ষাপট নিয়ে যুক্তিসংগত কথা বললে অথবা নীতিনির্ধারক মহলের কথার বাইরে গেলেই জবাবদিহিতা দিতে হয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে মনে, কোথায় আমাদের স্বাধীনতা? এখানেই ক্ষান্ত নয় বরং আমাদের দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলছে অনবরত। কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। শিক্ষার্থী তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু নির্লজ্জ শিক্ষকদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী তার কর্মজীবনেও এমন হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়তো কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করে আবার কেউ কেউ নিরবে সহ্য করে যায়। কিন্তু এভাবে আর কত কাল? তারাও তো মানুষ , তাদেরও আত্মসম্মানবোধ আছে। এই সমাজে তারাও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চায়। এদেশে বাল্যবিবাহের শিকার স্কুলপড়ুয়া মেয়েগুলোও পাচ্ছে না স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ। পাচ্ছে না তাদের কোনো ন্যায্য অধিকার। ১৮ বছর বয়সি মেয়েরাও উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে শহর অঞ্চলের মেয়েরা অনেকটাই স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা কি সেটা পেরেছে? তারা কেন পায়নি সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি। আমরা তো চেয়েছিলাম, যেখানে প্রথম স্বাধীনতাটা হবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ দেশের সম্পদ। দেশের বা জাতির চালিকাশক্তি। তাদের নিয়ে আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। আর সেই তরুণ সমাজের মত প্রকাশে বাধা বিপত্তি না দিয়ে। বরং পূর্ণাঙ্গ ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। তরুণ সমাজের মতাদর্শ গুলো রাষ্ট্র গ্রহণ করে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। আর যদি এর বিপরীত হয় তাহলে প্রিয় স্বাধীন ভূমি মহাকালের স্রোতে একটু একটু করে পিছিয়ে পড়বে। আমরা ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে হবেনা কোন নারী ধর্ষণ। হবেনা কোন নারী শ্লীলতাহানি। যদিও সম্প্রতিকালে এ দেশে বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। যা একটি স্বাধীন দেশে এরূপ ঘৃণিত ও বর্জনীয় কাজ মোটেও কাম্য নয়।
স্বপ্ন দেখি মানুষের নিরাপত্তায় আমার দেশ হবে প্রথম। আমাদের দেশের নারীরা এবং প্রত্যেক জনগণ পাবে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা।
আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ ঘৃণিত কাজ সংঘটিত হবে না। কিন্তু বিশ্বে দুর্নীতিতে আমরা সবসময় এগিয়ে থাকি। এটা একটা স্বাধীন দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তরুণদের কাঁধে ভর করে এগিয়ে যাবে আমার দেশ। কিন্তু দুর্নীতি দমন না করলে এমন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে কীভাবে সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে অস্ত্র কি জিনিস তা কেউ বুঝবে না। আর এদেশে শিক্ষা হবে একমাত্র হাতিয়ার। শিক্ষার্জনের মাধ্যমে এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক সুশিক্ষার আলো ছড়িয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। একে অপরের সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। আমরা এমন দেশের স্বপ্ন দেখি, যে দেশে পথশিশুরা মন খুলে হাসবে। অনাহারে কাটবে না আর তাদের দিন। বিভিন্ন ফুটপাতে এবং রেল স্টেশনে নিথর দেহের মত পড়ে থাকবে না আর। এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখি, যে দেশে বেকারত্বের মতো অভিশাপকে মুছে ফেলা হবে। কারণ বেকারত্ব একটি দেশের বিষফোঁড়া। দেশের প্রতিটি বেকার প্রাণের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করলে এদেশ পাবে প্রকৃত উন্নত রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা। অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার অভাব এবং দুর্বল ইংরেজি জ্ঞান থাকায় সৃষ্টি হয়েছে নানা রকম সমস্যা। আর বর্তমান সরকার এসব সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে। ফলশ্রুতিতে বেকারত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখি, যে দেশে থাকবে না কোনো অন্যায়, অবিচার। সবাই আইনের আওতায় পাবে সুষ্ঠু বিচার।
স্বপ্ন দেখি, ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য পৃথিবীর শীর্ষ তালিকায় রাখতে কিন্তু আজও ঢাকা শহর বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকার শীর্ষে। ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য গড়ে তুলতে চাই সুনিপুণ পদক্ষেপ। আর সেই পদক্ষেপ গুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই সম্ভব এমন বসবাস যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা। আরো স্বপ্ন দেখি, আমাদের দেশের শিক্ষার মানের উন্নতি ঘটানো। আমাদের দেশে স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার গুণগতমান বাড়েনি। তাই শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়াতে চাই গুণগতমানের উন্নয়ন। আর সেজন্য চাই সুনিপুণ পদক্ষেপ। আমরা যানজটমুক্ত বাংলাদেশ চাই, যে দেশে থাকবে না কোন যানজট। থাকবে শুধু যাত্রাপথে প্রশান্তি। এদেশে যানজটের কারণে জনসাধারণের মূল্যবান সময় যাত্রাপথে নষ্ট হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকা শহরে এর প্রভাব বিস্তার বৃহৎকারে দেখা যায়।
বেলাশেষে, আমরা চাই এমন একটা দেশ যেখানে শান্তি-শৃঙ্খল, স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পাওয়া যায়। সেইসাথে এদেশের মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পেতে হলে, মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে দুর্নীতি, ধর্ষণ, মাদক ও যানজটমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে । আর সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়ে সোনার বাংলায় পরিণত হোক। তাই এদেশকে ভালোবেসে, দেশের কল্যাণ কামনা করে। আমাদেরকে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, এদেশ আমার, আপনার, সকলের।
মু, সায়েম আহমাদ
তরুণ লেখক