ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বাড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত সব ওষুধের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়ার এসব ওষুধের তালিকায় রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ১১৭টি জেনেরিকের ২৮৫টি ব্র্যান্ডের ওষুধ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, এক্সিপিয়েন্ট (নিষ্ক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান), প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন, বিপণন ব্যয় এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণে ওষুধের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় দেশে-বিদেশে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। কাঁচামাল, প্যাকেজিংসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় ওষুধ উৎপাদনের খরচও বেড়ে যায়। ফলে এই সংক্রান্ত মূল্য নির্ধারণ কমিটি ও টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে শেষে ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান, ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ওষুধের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্যারাসিটেমল আগে যেখানে ভ্যাটসহ ৮০ পয়সা ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা। আর সিরাপের ক্ষেত্রে ২০ টাকার সিরাপ এখন হয়েছে ৩৫ টাকা।
তিনি আরও জানান, ওষুধ তৈরির প্রতি কেজি কাঁচামালের দাম আগে যেখানে ছিল ৪৮০ টাকা। তা এখন বেড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৪২০ টাকা। অতিপ্রয়োজনীয় এমন ২৮৫টির দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এখন ওষধু কোম্পানিগুলো ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়ে বর্ধিত মূল্যে বাজারে ওষুধ বিক্রি করবে।
জানা গেছে, দেশে এক সময় ৯৮ শতাংশ ওষুধ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হতো। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির কারণে উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি পণ্যটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় ৯৭ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধ তৈরির কাঁচামাল বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত এই সুযোগ থাকছে। কিন্তু ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে এলে বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ থাকছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ওষুধ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মোট ১৬০০ জেনেরিক ওষুধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১১৭টির দাম সবশেষ ২০০৬ সালে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, দেশে থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ১৮৮ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গেল জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৩.১৭ মিলিয়ন ডলার।
চস/স


