কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ে প্রধান বাধা পলিথিন। ড্রেজার পলি সাক করতে পারছে না পলিথিনের জন্য। এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর অকার্যকর হয়ে যাবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এর আয়োজনে সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বিষয়ক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। কোনো কাজ বাকি থাকবে না। গতকাল ১০৭টি ফাইল সই করেছি। আমি শেখ হাসিনার কর্মী।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে চট্টগ্রাম অর্থনীতিতে অবদান রেখে এসেছে। মাহবুবুল আলমের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। আরও কিছু প্রকল্প নিতে হবে। চট্টগ্রামের সম্ভাবনা প্রচুর। কয়েক হাজার কোটি টাকার বড় মাপের প্রকল্প হবে। অনেক শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে। সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের নিচু এলাকা পানির নিচে চলে যায়। নেদারল্যান্ড প্রমাণ করেছে- পানি ব্যবস্থাপনা কীভাবে করতে হয়। আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প দিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে। আমি সুপারভাইজ করবো।
‘চট্টগ্রাম বন্দর ছিল বলে আমাদের গ্রোথ ভালো এসেছে। দেশে আরও বন্দর হচ্ছে। আমাদের এখন টাকা আছে। আমরা মধ্য আয়ের দেশ। সঠিক প্রকল্প নিলে টাকার অভাব হবে না। ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ রাস্তা নির্মাণের পর কাটবে! এগুলো আগে কেন করা হয় না। বিদেশে সড়কের দুইপাশে পরিকল্পনা থাকে।’
‘চসিককে বলবো, আগে আগ্রাবাদে রিকশায় ঘুরতাম। ময়লা দেখিনি। তখন মানুষ কম ছিল। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এডহক ভিত্তিতে কিছু হবে না। টাউন প্ল্যান ৫০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে করতে হবে। মাস্টার প্ল্যান কেন হবে না? আমরা অক্ষম হলে পৃথিবীতে অনেক সক্ষম লোক আছে। তাদের সহযোগিতা নিতে হবে। উন্নত শহরগুলো স্মার্ট হচ্ছে কীভাবে! ভিশন থাকতে হবে, লিডারশিপ থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প নিলে বরদাশত করা হবে না। এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। টাকার জন্য দেশকে উচ্ছন্নে যেতে দিতে পারি না।’
আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দিই। সর্বশেষ মন্ত্রীকে চিঠি দিই। ৪০০ শিল্প প্রতিষ্ঠানে লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকায় সংকটে পড়েছে শিল্প কারখানাগুলো। নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না। পাশাপাশি মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরেও পানি সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। শিগগির সেখানে উৎপাদন শুরু হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুততর করার দাবি জানাই। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে ওয়াসার পানি সরবরাহের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দেশের ৯২ শতাংশ রফতানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। বে টার্মিনালের কাজ ২০২১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হলে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর করাটা সময়োপযোগী। হামলা মামলা মোকাবেলা করে কর্ণফুলী ড্রেজিং জরুরি। কর্ণফুলী বাঁচলে বন্দর বাঁচবে, বন্দর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে দেশ এগিয়ে যাবে। বন্দরে নতুন নতুন জেটি গড়ে তুলতে হবে।
চেম্বার সভাপতি কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, এলএনজি টার্মিনাল, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ, ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুত গতির ট্রেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ককে ৮ লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, গণপরিবহন, জলাবদ্ধতা নিরসন, মহাসড়কে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা, ব্লু ইকোনমিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।
উপস্থিত ছিলেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ, ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদ প্রমুখ।