চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার আজ শেষ দিন। ২১ দিনব্যাপী লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলায় বিদায়ের সুর। এবারের মেলায় শুরুর দিকে পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম থাকলেও শেষের দিকে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাঠক-দর্শনার্থীর পদচারণায় উৎসবে রূপ নিয়েছিলো মেলা। নানা আয়োজনে ভরপুর ছিল এবারের বইমেলা। দেখতে দেখতে প্রাণের বইমেলায় বেজে উঠল বিদায়ের সুর। পরের বছর আবার নতুন রূপে হাজির হবে এই মেলা।
৭ ফেব্রুয়ারি শুরু এবারের বইমেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৯ দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, কবি সাহিত্যিক লেখক ও মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সার্বিকভাবে মেলাকে সফল ও গোছানো বলে মন্তব্য করেছেন।
মেলা কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন মঞ্জু জানান, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গত পাঁচ বছর ধরে সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিবারই আগের বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো ও গোছনো হচ্ছে মেলা। আগের বছরের ভুল-ত্রুটি পরের বছরে সংশোধন করে আমরা মেলা অধিকতর আকর্ষণীয় ও পাঠকবান্ধব করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের মেলায় প্রথম ১৯ দিনে ১৪০ টি স্টলে মোট আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার তুলনায় অনেক ছেট পরিসরে বইমেলার আয়োজন করি। আমাদের চেষ্টা থাকে কম জায়গার মধ্যে একটি রুচিশীল ও গোছানো মেলা আয়োজনের। গতকাল একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় মেলায় এসেছিলেন। তিনি আলোচনা পর্বে বলেছেন, চট্টগ্রামের বইমেলা ছোট পরিসরে হলেও ঢাকার তুলনায় অনেক পরিপাটি। এখানে ঢাকার মতো ধুলাবালির উৎপাত নেই।’
মেলায় ইটের পরিবর্তে কার্পেটে মাঠ ঢেকে দেয়ার কারণে ধুলাবালি কম হয়েছে উল্লেখ করে ড. নিছার বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে আমরা এবার ইটের পরিবর্তে কার্পেটে মাঠ ঢেকে দিয়েছি। ইট বিছানো হলে অনেক সময় কিছ কিছু স্থান উঁচু-নিচু হয়ে যায়। এতে বয়স্করা সমস্যায় পড়েন। অনেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।
এবার ঢাকা থেকে ৫০টি প্রকাশনা সংস্থা চট্টগ্রামের বইমেলায় অংশ নিয়েছে। গতবারের মেলায় ছিল ৩৮টি। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। বিজয়ীদের তাৎক্ষণিকভাবে বই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এলইডি স্ক্রিনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও দেশাত্মবোধক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিয়েছি, যা আগতদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।’
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে এসে বিক্রি বেড়েছে। আজ ও কাল আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। গল্প, উপন্যাস, ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার বইয়ে সাজানো মেলার ১৪ টি স্টল। দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক থেকে শুরু করে তরুণ লেখকদের অনেক বই বেরিয়েছে। এদের ভিড়ে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখকদের সাড়া জাগানো বইগুলো সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অনুবাদের বইয়েরও চাহিদা রয়েছে এবার।
আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলা মঞ্চে চিত্রাঙ্কনসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ অংশগ্রহণকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকদের মাঝে সনদ প্রদান এবং সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ স্টলকে পুরস্কার প্রদান করবেন প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
চস/আজহার