spot_img

২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সর্বশেষ

ইসরায়েল বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য

গাজার অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা না নিলে এবং প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ নিয়ে অস্ত্রবিরতিতে না পৌঁছলে রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্য।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, গাজার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির অবসানে ইসরায়েল বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য।

স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যিকভাবে অন্য শর্তগুলোও পূরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হওয়া, দ্বি-রাষ্ট্রীক সমাধানের দিকে যাওয়ার পথ সুগম করতে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীল শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতি, পশ্চিম তীরে ভূমি অধিগ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং জাতিসংঘকে ত্রাণ সরবরাহ ফের শুরু করার অনুমোদন দেওয়া অন্যতম।

এসব শর্ত পূরণ না হলে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে; জানিয়েছে বিবিসি।

এক অনাহার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আর ব্যাপক মৃত্যু এড়াতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

রয়টার্স লিখেছে, দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা আর মৃত্যুর সর্বশেষ সংখ্যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের ভয়ানক দুটি মাইলফলক। হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ২১ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্ল্যাসিফিকেইশন (আইপিসি) গাজার অনাহার সঙ্কটকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার সম্ভাবনা উত্থাপন করেছে। তারা বলছে, গাজায় আরও অনেক বেশি খাদ্য সরবরাহের অনুমতি দিতে এটি ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে পারবে বলে আশা করছে তারা।

এসব উদ্বেগজনক বার্তা সামনে রেখেই ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। এতে গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে থাকা ইসরায়েলের ওপর চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত সপ্তাহে ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, তারা সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। ফ্রান্সের এই ঘোষণায় ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে।

এবার স্টারমারের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে বলেছেন, “এটি হামাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করবে আর তাদের শিকারদের শাস্তি দেবে।”

“আজ ইসরায়েলের সীমান্তের একটি জিহাদি রাষ্ট্র আগামীকাল ব্রিটেনকে হুমকি দেবে,” লিখেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সোমবার স্কটল্যান্ডে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বত্তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি।

ব্রিটেন এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তিনি ‘কিছু মনে করবেন না’ বলেও জানিয়েছেন।

কিন্তু মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়ে হামাসকে ‘পুরস্কৃত করা উচিত’ হবে বলে তিনি মনে করেন না।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ডব্লিউিএএফএ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্টারমারের সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ বলে বর্ণনা করেছেন।

যদি স্টারমার তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন তাহলে তা মূলত প্রতীকি হবে। পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ড নিয়ে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে তার প্রায় পুরোটাই ইসরায়েল দখল করে রেখেছে।

তবে স্টারমারের এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ইসরায়েল আরও বিচ্ছিন্ন হল। গাজায় বাধাহীনভাবে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে চলেছে। অবরুদ্ধ গাজার সবগুলো প্রবেশপথ ও বের হওয়ার রাস্তা ইসরায়েল আটকে রেখেছে।

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম ও প্রভাবশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন পরিষ্কার করে জানিয়েছে, খুব শিগগির ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বত্তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন কিনা, জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা দেননি ট্রাম্প।

মঙ্গলবার নিজেদের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার পৃথক ফোন কলে নেতানিয়াহু ও আব্বাসের সঙ্গে কথা বলে নেন।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss