বড় ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০ দিন ধরে দেশের প্রধান এ বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজারের বেশি কন্টেইনার জমে থাকছে।
সবশেষ গত কয়েকদিনে যা ধারণক্ষমতার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। এতে বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে কন্টেইনার জট।
বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৫৩ হাজার। তবে ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পর্যন্ত কন্টেইনার থাকাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বুধবার (২০ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে জমে থাকা কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৪৬৩ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনারের একক হিসেবে)। এর আগের দিন যা ছিল ৪৮ হাজার ৭৫১ টিইইউএস। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন এ সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৩১ টিইইউএস।
বন্দরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অগাস্টের শুরু থেকেই ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমে থাকার পরিমাণ বাড়ছে। ১ অগাস্ট ছিল ৩৯ হাজার ৬৭৮ টিইইউএস, যা তিন দিন পর ৪ অগাস্ট বেড়ে হয় ৪৪ হাজার ২৮৭ টিইইউএস। পরের দিনগুলোতে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। কাস্টমসের কর্মবিরতি, কলমবিরতি, ঈদের দীর্ঘ ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে যে জটের সৃষ্টি হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা কিছুটা রয়েছে। তবে ছুটির দিনগুলোতে কম কন্টেইনার খালাস হওয়ার কারণে জট বাড়ছে।
গত জুনের শেষের দিকে এনবিআর কর্মকর্তারা দুই দফায় কলমবিরতি ও কর্মবিরতি পালন করলে সেসময় নানা কারণে কন্টেইনার জট হলেও তা এতটা তীব্র ছিল না। গত ২৫ মে ৪২ হাজার ৩১৫ টিইইউএস এবং ২৪ মে ৪১ হাজার ৩১৪ টিইইউএস কন্টেইনার জমে ছিল।
বন্দর ব্যবহারীকারীদের মতে, দ্রুতই কন্টেইনার জট কমাতে বন্দরের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সংকট তৈরি হতে পারে।
চট্টগ্রাম শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, “আগের মত এনবিআরের কলম বিরতি বা কর্মবিরতি নেই। জাহাজ জটও কমে এসেছে। জাহাজের অপেক্ষমান সময়ও এখন কম। তারপরও জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়ছে। এজন্য বন্দরের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।”
দুই ঈদে দীর্ঘ ছুটি, সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কন্টেইনার ডেলিভারি কমে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, পড়ে থাকা খালি কন্টেইনারগুলো নতুন একটি ডিপোতে পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে। সেখানে চার হাজার ধারণক্ষমতা রয়েছে। সেটি হলে কিছুটা হয়তো জট কমতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোমাত্রায় চলছে। প্রতিদিন কোনো জেটি জাহাজ শূন্য থাকছে না। আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সেকারণে কন্টেইনার আসার পরিমাণও বাড়ছে।
তিনি বলেন, “বর্তমানে কোনো জাহাজ জটও নেই। অপেক্ষমান কন্টেইনার জাহাজের সংখ্যা সাত-আটটিতে নেমে এসেছে। জাহাজের গড় অবস্থানকালও কমে এসেছে।”
জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাস্টমসের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে জটের ধারাবাহিকতা আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খালাস কমার কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
“এখনো কন্টেইনারের পরিমাণ আমাদের ধারণক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। আমদানিকারকরা দ্রুত খালাস নিলে জট কমে আসবে আশা করা যায়।”
এদিকে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোমুখী (আইসিডি) কন্টেইনারগুলো একদিনের মধ্যে নির্ধারিত ডিপোতে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। গত সপ্তাহে দেওয়া এ নির্দেশনায় প্রথম দিনে না হলেও দ্বিতীয় দিনের মধ্যে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, কন্টেইনার জমে যাওয়ায় জাহাজ পরিচালনা ধীর হয়ে পড়ছে, কন্টেইনার খালাসে দেরি হচ্ছে। সূত্র: বিডি নিউজ ২৪
চস/স