spot_img

২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

চীনে মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে

চীন সরকার জিনজিয়াংয়ে আদিবাসী মুসলমান শিশুদের তাদের পরিবার, বিশ্বাস ও ভাষা থেকে সুকৌশলে বিচ্ছিন্ন করছে বলে গবেষকরা দাবী করছেন। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের প্রাপ্ত বয়স্কদের বিশাল বিশাল বন্দিশিবিরগুলোতে আটকে রাখা হচ্ছে বলে জানায় বিবিসি। দেশটির সরকার প্রকাশিত কিছু তথ্য এবং বিদেশে বসবাস করা ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিবিসির এক গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্যগুলো উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু একটি শহরেই চারশতাধিক শিশুর পিতা-মাতা উভয়কেই হয় বন্দিশিবিরে বা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বিবিসি অনুমোদিত গবেষকরা মনে করেন, ওই সব শিশুদের ‘কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া শিশু সুরক্ষার’ প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা

হওয়ার দরকার। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে ঠিক কি করা হচ্ছে সেটাও দেখা দরকার। ‘আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছি তা শিশুদের পর্যায় ক্রমে তাদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে প্রচারণা চালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি এবং জিনজিয়াংয়ের উপর এখন চীন সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে ওই অঞ্চল থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য বের করা সম্ভব না বলে জানান গবেষকরা।
কারণ, সেখানে বিদেশি সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়। তবে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া উইঘুর মুলসমানদের কাছ থেকে কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করা গেছে। ইস্তাম্বুলে বড় একটি হলে লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষ তাদের জীবনের গল্প বলার অপেক্ষায় আছেন। তাদের হাতে ধরা সন্তানদের ছবি, যারা সবাই জিনজিয়াংয়ের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে। এরকম এক মা ছবিতে তার তিন মেয়েকে দেখিয়ে বলেন, আমি জানি না এখন তাদের কে দেখাশোনা করছে। তাদের সঙ্গে আমি কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না।
তিন মেয়ে ও এক ছেলের ছবি হাতে আরেক মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, আমি শুনেছি তাদের এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আলাদা আলাদা ভাবে এরকম ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গবেষকরা।
যারা জিনজিয়াংয়ে শতাধিক শিশু নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। নিখোঁজ শিশুগুলো তাদের সন্তান বা খুব কাছের আত্মীয়।
শিশুরা সবাই চীনের উইঘুর মুসলমান সম্প্রদায়ের। জিনজিয়াংয়ের বৃহৎ আদিবাসী মুসলমান সম্প্রদায় উইঘুরদের সঙ্গে তুরস্কের ভাষা ও বিশ্বাসের মেলবন্ধন দীর্ঘদিনের।
চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ লেখাপড়া, ব্যবসা, পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বা চীনের কঠোর এক সন্তান নীতি এবং ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তুরস্কে যাতায়াত করতো।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে তারা আটকা পড়ে আছে। তিন বছর আগে চীন সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধরে ধরে বন্দিশিবিরগুলোতে নিয়ে যাওয়া শুরু করে।
চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ‘ ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জন্য উইঘুর মুসলমানদের নানা শিক্ষা দেওয়া হয়।
কিন্তু নানা প্রমাণ বলছে, সেখানে শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্ম পালন এবং মুখঢাকা হিজাব পরার কারণে অনেককে ধরে আনা হয়েছে। কাউকে কাউকে তুরস্কে বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণেও। ফলে তুরস্কে যাওয়া উইঘুররা সেখানে আটকা পড়ে গেছেন। তারা জানেন, দেশে ফিরলেই বন্দী হতে হবে।
এমনকি পরিবারের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। চীন সরকার ফোনের উপর কড়া নজর রাখে। তাই জিনজিয়াং থেকে তুরস্কে ফোনে যোগাযোগ করাও বিপজ্জনক।
হলে আসা এমন এক বাবা বলেন, জিনজিয়াংয়ে তার স্ত্রীকে বন্দী করা হয়েছে।
‘আমি আমার আট সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সম্ভবত তাদের সরকারের শিক্ষা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ বিশ্বের সামনে জিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের গণহারে বন্দি করার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন।
বিবিসি অনুমোদিত নতুন এই গবেষণায় সেখানকার হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে আসলে কি হচ্ছে তার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
সেখানে স্কুলগুলোর ক্যাম্পাস বড় করা হচ্ছে, নতুন নতুন আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে। এভাবে স্কুলগুলোতে ছাত্র ধারণ ক্ষমতা বৃহৎ আকারে বাড়ানো হচ্ছে।
এর মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই চীন সরকার হাজার হাজার শিশুকে সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে আসার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বন্দীশিবিরগুলোতেও নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। এবং নিশ্চিতভাবেই উইঘুর আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্যই এত আয়োজন চলছে।
বিবিসি জানায়, চীন সরকারের দেওয়া তথ্যে এক ২০১৭ সালেই জিনজিয়াংয়ে শিশুদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি বেড়ে গেছে।
হঠাৎ করে শিশুদের প্রাক-স্কুলে ভর্তির হার এত বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বেশি অবদান উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুদের।
ফলে আগে যেখানে জিনজিয়াং অঞ্চলে শিশুদের প্রাক-স্কুলে ভর্তির হার চীনের গড় হারের অনেক নিচে ছিল সেখানে এখন তা পুরো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

 

চস/ সোহাগ

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss