নিজস্ব প্রতিবেদক , আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে গ্যাসের নতুন দাম। বর্তমান দাম অনুযায়ী এক চুলার জন্য গ্রাহকদের ৭৫০ টাকার বদলে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ৮শ টাকার বদলে ৯৭৫ টাকা করে গুনতে হবে। সে হিসেবে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২.৮ শতাংশ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই গতকাল রোববার বিকেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশন এ আদেশ দেয়। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান ও রহমান মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবাসিকে প্রিপেইড মিটারে প্রতি ঘনমিটার ১২.৬০ টাকা, এক চুলার গ্যাসের দাম ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা ও দুই চুলার গ্যাসের দাম ৮শ টাকা থেকে ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্যাসের গড় দাম ঘনমিটারে ৭.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৪৫ টাকা, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের (ক্যাপটিভ পাওয়ার) জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৩.৮৫ টাকা, সার কারখানায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়বে ৪.৪৫ টাকা। এছাড়াও শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১০.৭০ টাকা, চা বাগানে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১০.৭০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ১৭.০৪ টাকা। এছাড়া গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাধারণ মানুষ
ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা, হোটেল মালিক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় ফল ব্যবসায়ী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘ব্যয়বহুল একটা শহরে থাকি। তার ওপরে গ্যাসের মত সহজলভ্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ কিনতেও যদি হাজার টাকা গুনতে হয়, তাহলে আমরা বাঁচব কিভাবে? বাজেটের পর সবকিছুর দাম বেড়েছে, এখন বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম! আমাদের জন্য বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে ‘
গৃহিনী হালিমা খাতুন বলেন, ‘গ্যাসের দাম না বাড়ালে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হতো না। সাধারণ মানুষ এখন বিপদে পড়বে। বিশেষ করে আমাদের মত বেতনভূক্ত মধ্যবিত্তদের বেশি কষ্ট করতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়ার জেরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোরও দাম বাড়বে। তখন বিপদ আরও বাড়বে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই মত দিয়েছেন ঢাকার বেশ কয়েকজন হোটেল মালিক ও সিএনজি চালক। শাহবাগের একজন হোটেল মালিক বলেন, ‘রান্না করা খাবার ব্যবসায় এমনিতে অনেক বেশি খরচ। বিশেষ করে গ্যাস বিলের খরচ অনেক বেশি। এখন গ্যাসের দাম বাড়লে আমাদের খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে খাবারের দাম বাড়াতেও আমরা বাধ্য হব। সাধারণ জনগণ বিপদে পড়বে।’
এ ব্যাপারে সাইন্সল্যাব এলাকার একজন চালক বলেন, ‘প্রতিদিন ১ হাজার ৩শ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজি ট্যাক্সি চালাই আমরা। রাস্তার খরচ মিলিয়ে সেটা ২ হাজারে পৌঁছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়লে। স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বেশি চাইতে হবে। এখন যে ভাড়া চাই তাতে লোকজনের সাথে প্রতিদিন ঝসড়া হয়। আগামীকাল (আজ ১ জুলাই) থেকে ঝগড়া আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক।’
গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিএআরসি আইন ২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) ও ৩৪ অনুযায়ী তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানো হলো।’
ঘোষণায় আরও জানানো হয়, বাণিজ্যিক গ্রাহকশ্রেণির অন্তর্ভূক্ত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গ্রাহকদের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর বাইরে গৃহস্থালি ছাড়া অন্য গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে।