ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো তামাকজাত পণ্য বা তামাকের ব্যবহার প্রবর্ধনের উদ্দেশ্যে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
তবুও প্রকাশ্যে তামাক জাতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই)। এক রঙা টি-শার্ট, ভ্যান আর নানা বিজ্ঞাপন সামগ্রী নিয়ে নগরব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মীরা।
গত বছর বাংলাদেশের সিগারেট বাজারে প্রবেশের পর থেকেই প্রচারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে দূরপ্রাচ্যের এ কোম্পানি।
কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান আইনের এ বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনি বিধি নিষেধ এড়িয়ে আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেটিআই।
চলতি বছরের শুরুতে জাপানিজ কোয়ালিটি শিরোনামে মিডিয়া ক্যাম্পেইনও চালিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জবসার্চ পোর্টাল বিডিজবস এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রচার চালিয়েছিল তারা। তবে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা’র হস্তক্ষেপে বিডিজবস কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত জেটিআই এর বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
এদিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে জেটিআই এর আগ্রাসী প্রচারণা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। তারা বলছেন, সরকার যেখানে দেশের তরুণ সমাজকে মাদক এবং তামাক থেকে দূরে রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে প্রকাশ্যে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে জেটিআই কিশোর, তরুণসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে তামাকের প্রতি আকৃষ্ট করছে।
স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন- ইপসার উপ পরিচালক নাছিম বানু বলেন, ‘জেটিআই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের পর থেকেই আইন ভঙ্গ করে বিভিন্ন উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ৪৯ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ এখন তামাক ব্যবসা সম্প্রসারণের লোভনীয় বাজার। দেশের সিগারেট বাজার বছরে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে। এসব হিসাব-নিকাশ করে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত উপায়েই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করেছে জেটিআই। সিগারেট বাজারে প্রবেশের পর থেকে তারা যেভাবে আগ্রাসী প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে তাতে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অস্তিত্ব ও প্রয়োগ কার্যত হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি দাবি করেন, আমরা জেটিআই এর এ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে নতুন কোনো তামাক কোম্পানির প্রবেশ ঠেকাতে হবে।’ যোগ করেন এ সমাজকর্মী।
চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যারা এ কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আগেও আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়েছি। নতুন করে কেউ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের কোথাও প্রকাশ্যে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রদর্শনী দেখলে সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও বিপুল পরিমাণ তামাকের বিজ্ঞাপন সামগ্রী মজুদ রাখায় গত ১৭ জুলাই রাজশাহীতে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালকে (জেটিআই) এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান চলাকালে বিপুল পরিমাণ তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন সামগ্রী(ফেস্টুন, লিফলেট, সিগারেটের ডামি প্যাকেট, নতুন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন, গিফট) জব্দ করা হয়।
এর আগে গত ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সুপারশপে তামাক বিরোধী অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আইন না মেনে প্রকাশ্যে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করায় খুলশীর অভিজাত সুপারসপ ‘বাস্কেট’ কে জরিমানা করেন আদালত।
চস/আজহার