সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তখন আমি ছিলাম সেনাপ্রধান। বঙ্গবন্ধু একটা মস্ত বড় ভুল করেছিলেন, তিনি আমাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন আর জিয়াউর রহমানকে করেছিলেন উপপ্রধান।’ সফিউল্লাহ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘শোকাবহ আগস্ট স্মরণে’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে কে এম সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান ও জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়েছিল। কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান করাটা ঠিক হয়নি। আমি সেনাপ্রধান হতে চাইনি। জেনারেল ওসমানী ৫ এপ্রিল ডেকে বললেন, “তুমি আর্মি টেকওভার কর।” আমি বললাম, আমার সিনিয়র আছে। তিনজন সিনিয়রের নাম বললাম। কর্নেল রব, দত্ত ও জিয়া। আমরা একই ব্যাচের হলেও জিয়া আমার চেয়ে ১ নম্বরের সিনিয়র ছিলেন। জেনারেল ওসমানীকে আমি বললাম, স্যার, এই সময়ে কি কাজটা ঠিক হবে? আমাদের মধ্যে তো একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত হোক আর যা হোক, এটা ঠিক হচ্ছে না।’ সফিউল্লাহ বলেন, ‘অনেকেই বলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। আমার সে সময় সামর্থ্য ছিল না। কী করতে পারতাম! ওই সময়ে কিছু করার মতো আমাদের পজিশন ছিল না।’ আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার বক্তৃতায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার জন্য যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এ কাজটা সুক্ষ্মভাবে করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।’ মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক বিষয় বলেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, সারা জাতিকে সেই স্বপ্ন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দুনিয়াতে আর কোনো বিপ্লবী এটা করতে পারেননি।’ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, ‘জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। অনেক ঘাতকের বিচার হয়েছে। কয়েকজন বিদেশে আছেন। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের হাত ছিল।’ হারুন হাবীব বলেন, ‘শুধু বিচার করলেই হবে না। একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। এর পেছনের কুশীলব, ষড়যন্ত্রকারী যারা বেসামরিক, সামরিক এমনকি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিল, তাদের নাম ও পরিচয় নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।’ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি আনোয়ার উল আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন দেশের জন্ম হতো না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি আমরা, এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। যাঁর হাত ধরে দেশের স্বাধীনতা এসেছে তাঁর হত্যাকান্ডের পর রাজধানীতে একটি জানাজাও করার সাহস পাননি কেউ এটা জাতির ব্যর্থতা।’ আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. নুরুল আলম, যুগ্মমহাসচিব আবদুল মাবুদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল হাই প্রমুখ।
** বিডি-প্রতিদিনের সৌজন্যে **
চস/সোহাগ