চলতি বছরের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস বাড়িয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে জ্বালানিটির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলে স্থানান্তরকে চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন সংস্থাটির বিশ্লেষকরা।
আইইএ কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর দৈনিক ৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল করে বাড়ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা। মোট দৈনিক চাহিদা বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ২১ লাখ ব্যারেলে।
গত মাসে আইইএ জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস কমিয়েছিল। তবে এ মাসে তা অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়। বিশেষ করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব ও ইরাকে চাহিদা লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে।
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলে স্থানান্তর বাদে অন্যান্য খাতে পণ্যটির চাহিদা নিম্নমুখীই থাকবে বলে জানিয়েছে আইইএ। এ কারণে চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র দৈনিক ৪০ হাজার ব্যারেল।
আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মোট বৈশ্বিক চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক ৯ কোটি ৯৭ লাখ ব্যারেল। আগামী বছর তা আরো বেড়ে ১০ কোটি ১৮ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হতে পারে।
এদিকে গত মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ বেড়ে মহামারীপূর্ব অবস্থায় পৌঁছেছে। সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১০ কোটি ৫ লাখ ব্যারেলে। উত্তর সাগর, কানাডা ও কাজাখস্তানে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম শেষ হওয়ায় সরবরাহ গতিশীল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস মোট জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল করে বাড়িয়েছে। জোটটির উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রাও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। জুলাই মাসে নন-ওপেক দেশগুলোর উত্তোলন দৈনিক ৮ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল করে বেড়েছে। বছরের শেষ নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ দৈনিক আরো ১০ লাখ ব্যারেল করে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে রাশিয়ায় উত্তোলন বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হলেও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক ও রফতানিকারক। ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির জ্বালানি তেল রফতানি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো রুশ জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় রাশিয়াকে বাজার বদলাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে রাশিয়া।
বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জুলাই মাসে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি দৈনিক ১ লাখ ১৫ হাজার ব্যারেল করে কমেছে। দৈনিক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ লাখ ব্যারেল। অথচ দেশটি চলতি বছরের শুরুতে দৈনিক ৮০ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছিল। যুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কোরিয়ায় রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানি প্রায় দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল করে কমেছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই অন্যান্য বিকল্প বাজারে সরবরাহ করেছে রাশিয়া। জুনে দেশটি জ্বালানি তেল রফতানি করে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার আয় করেছিল। কিন্তু জুলাই মাসে আয় কমে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে নেমেছে। আইইএর চাহিদা বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে শুরু করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। চাহিদা বাড়ার খবরে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম এক লাফে ২ ডলার ৪১ সেন্ট বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বর সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়ায় ৯৪ ডলার ৩৪ সেন্টে, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ২ ডলার ২০ সেন্ট বেড়ে ৯৯ ডলার ৬০ সেন্টে উন্নীত হয়।
চস/আজহার