পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচার জন্য এখন আর জ্যাম ঠেলে ব্রোকারেজ হাউজে যেতে হচ্ছে না। মোবাইল অ্যাপেই লেনদেন সেরে নিতে পারছেন অনেক বিনিয়োগকারী। শত শত মাইল দূরের কাউকে মুহূর্তেই টাকা পাঠানো যাচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে। মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবের জন্য প্রয়োজনীয় কনটেন্ট তৈরি করে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন অনেকেই। জরুরি মুহূর্তে ডাক্তারের সেবাও পাওয়া যাচ্ছে। এভাবেই খাওয়া-দাওয়া বা ঘুমের মতো মানুষের জীবনে অপরিহার্য উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল ফোন, যা প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় মোবাইল ফোনের নিত্য ব্যবহারে জীবন বদলে যাওয়ার নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণার জন্য দেশের আট বিভাগের ২৪০ জনের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে; এর মধ্যে ১৩০ জন নারী।
গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘মোবাইল ফোন : স্কিল, কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোসিয়েশন’ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো মোহাম্মদ গোলাম নবী মজুমদার। এতে বলা হয়- বিকাশ, রকেটসহ নানা ব্যাংকিং কার্যক্রমও এখন মোবাইলনির্ভর। এখন ই-কমার্স আর বলা হয় না, বলা হয় এম কমার্স। মোবাইল মানুষদের অনেক কিছুই শেখাচ্ছে এবং জীবনকে সহজও করেছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন মানুষেরা মোবাইল ব্যবহার করে বর্ণমালা শেখে, নতুন ভাষা শেখে, মুখে কথা বলে মোবাইলে টাইপ করে, লিখিত মেসেজ ভয়েস কনভার্ট করে শুনে, ইমেজ কিংবা অডিও/ভিডিও ফাইল ক্লাউডে সেভ করে এবং মোবাইলে ভিডিও বানিয়ে টিকটকে পোস্ট করে। তাদের কাছে মোবাইল কেবল মাত্র জীবনের একটি নতুন অনুষঙ্গই না, মোবাইল তাদের কাছে এমন একটা প্রযুক্তি যা মানুষের জীবনের মৌলিক সত্তার জাগরণ ঘটায়। মোবাইল ফোনের গুরুত্বটা তখনই স্পষ্ট হয় যখন তাদের ফোনটা প্রয়োজন কিন্তু কাছে থাকে না বা তখন সেটা ব্যবহার করার উপযোগী নয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, এই ছোট ডিজিটাল মেশিনের বরাতে মানুষ গড়ে তোলে বিবিধ সামাজিক সম্পর্ক। এই মোবাইলের মাধ্যমে তরুণরা ধীরে ধীরে তাদের নিজেদেরই নতুন করে ভাবতে ও চিনতে শুরু করে। সেই সব মানুষেরা মোবাইলকে যতটা না খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার বা কো-অপ্ট করে, তারচেয়ে বেশি সে নিজেকেই নতুনভাবে খুঁজে পায় কিংবা গড়ে তোলে। মোবাইলের বরাতে, এই অবহেলিত মানুষেরা প্রায়শই প্রথম বারের মতো জীবনের আনন্দ পেতে শুরু করে। এই অর্থে, প্রযুক্তি মানুষের সক্ষমতাই শুধু বাড়ায় না, মানুষের মানবিক সত্তা ও সামাজিকতারও নিয়ামক হয়ে ওঠে।
গবেষণারও ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, মোবাইল ফোন একটি ডিজিটাল ডিভাইস, যার মাধ্যমে মানুষ কথা বলছে, টিভি দেখছে, রেডিও শুনছে, হিসাব-নিকাশ করছে, কম্পিউটার ল্যাপটপের কাজও করছে। এমন কোনো কাজ নেই যা এর মাধ্যমে হচ্ছে না। সবকিছুই সংযুক্ত করা হয়েছে এই ছোট্ট ডিভাইসটির মধ্যে। যার ফলে এই ছোট্ট ডিভাইসটি মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। কিন্তু যে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব মানব জীবনে আছে সেটি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। এই গবেষণায় দেখা গেছে কীভাবে একজন সাধারণ মানুষও মোবাইল ফোনের ইতিবাচক ব্যবহার করে। অনেককে আইসিটি নিরাপত্তার বিষয়টিও সচেতন থাকতে দেখা যায়। এই গবেষণা আরও বিস্তৃত করা দরকার।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, মোবাইল জীবনের অংশ। এটি দ্রুত মানুষের জীবনের সত্তা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এটি সমাজের মূল্যবোধকে নষ্টও করেছে। সেই সঙ্গে সময়ের মতো দুষ্প্রাপ্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে মোবাইল ফোনে। এসব নিয়েও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে।
তথ্যসূত্র: দেশ রুপান্তর
চস/আজহার