প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, আমাদের অর্থনীতি কত উপরে উঠে গিয়েছিল এবং এটা মনে হল আর কিছুই না বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেওয়া। এটা বোধহয়, এর পেছনের ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক।
শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটর) হাসপাতালে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সেখানে তিনি গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। প্রধানমন্ত্রী আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধটা কী করেছি? আমার কি এটাই অপরাধ, মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি। আর সেই জায়গাগুলোতেই হামলা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতোগুলো পরিবারের ক্ষতি হল, এর দায়দায়িত্ব কাদের? তাদের বিচার এই দেশের মানুষের করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন বাংলাদেশকে একটা জায়গা নিয়ে আসলাম। সেখানে দেখি, জ্বালাও-পোড়াও সব কিছু, ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেখানে।’
জনগণের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মেট্রোরেলে মানুষ কত অল্প সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতো, আবার ফিরতে পারতো। সেই স্টেশনগুলো পুড়িয়ে এখন ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের কষ্ট। আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি। কিন্তু যারা এইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আবার কষ্টে ফেলে দিলো, তাদের বিচার এ দেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি শুধু সকলের সহযোগিতা চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার কি এটাই অপরাধ যে আমি মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি। আর সেই জায়গাগুলোতেই হামলা করতে হবে!’
সাম্প্রতিক সংঘাতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব কার?-এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা তো আমি বাতিলই করে দিয়েছি। আমি আহ্বান করেছিলাম, একটু ধৈর্য্য ধরো। হাইকোর্টে শুনানি হবে, হাইকোর্ট যে রায় দেয়। না তারপরেও এই আন্দোলন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো। এর দায়দায়িত্ব কাদের? আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাবো। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ, এ দেশকে নিয়ে যেন আর কেউ চালাতে না পারে। আমি সকলের সাহায্য চাই।’
সংঘাতে যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারাবার ব্যথা কত কষ্টের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(স্বজন হারানোর) কষ্ট বুকে নিয়েই তো ফিরে এসেছি এ দেশের মানুষের জন্য। এখানে আমার তো কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়ের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া, নিজেরাই চাকরি করেছে, নিজেরাই লেখাপড়া করেছে, আমি কতটুকু করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, তখনই এই তাণ্ডব করে যে জায়গাগুলোতে মানুষের সেবা সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আহত তাদের সকলের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে আমরা করে দেবো, করে দিচ্ছি।’
যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা পা হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে, আমরা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দেবো। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলতে পারে, নিজের কাজ করতে পারে।’
বিভিন্ন দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন আর তার ফলাফল আজকে এই অবস্থা। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না। কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সম্পূর্ণ দাবিই মেনে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা। এর ফল আজকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব দিকে ছারখার। আর আজকে কত মানুষ জীবন হারালো। কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটও এ রকম তাণ্ডব চালিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সংঘাতে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ভবন, দুর্যোগ ভবন এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা পরিদর্শন করেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সংঘাতে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। ওই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন পরিদর্শন করেন এবং বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্থ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি।
চস/স