চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সারবহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ জন খুনের ঘটনায় রহস্য উদঘাটন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। এ ঘটনায় আকাশ মন্ডল ইরফান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে। ইরফান জাহজের সুকানির সঙ্গে ইঞ্জিনরুমে কাজ করতেন।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে র্যাব দাবি করে, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কোনো প্রকার বেতন ভাতা দিতেন না এমনকি তিনি দুর্ব্যবহারও করতেন। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান সবাইকে হত্যা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্য মতে র্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করার ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিনি ৩ পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল।
র্যাব দাবি করে বলে, আগের দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পড়ে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করেন ইরফান। র্যাব আরও দাবি করে, ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সে জন্য ইরফান মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করেন।
ইরফানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে র্যাব দাবি করে, ইরফান যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙ্গর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে জাহাজ চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যান।
এদিকে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সারবহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ জন খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ‘ডাকাত দলকে’। মঙ্গলবার রাতে হাইমচর থানায় মামলাটি করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন।
এর আগে গত সোমবার চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজ থেকে ৫ জনকে মৃত ও ৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পণ্যবাহী জাহাজটি গত রোববার সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার ঘাট থেকে যাত্রা করে। এরমধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরা জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। এতে সন্দেহ হয় মালিকপক্ষের। জাহাজের অবস্থান এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অন্য জাহাজ মুগনি-৩ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। ওই সময় মুগনি-৩ জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরা নামক জাহাজটিকে দেখতে পায়। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন। ফোন পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন। তারা যখন জাহাজটিতে উঠেছিলেন, তখন ইঞ্জিন বন্ধ ছিল।
সূত্র : সমকাল
চস/আজহার