spot_img

২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বুধবার
১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডেস্ক রিপোর্ট

সর্বশেষ

চট্টগ্রামের উন্নয়নে এবি পার্টির পাঁচ প্রস্তাব

একজন ব্যক্তি বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যেতে টানেল করেছে, আরেকজন বাসা থেকে যেন বিমানবন্দরে যেতে পারে সেজন্য এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে এবি পার্টির পাঁচ প্রস্তাব’ শীর্ষক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্র উন্নয়নের মডেল একটা লুটপাটের মডেল দিয়ে তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের যে বিশাল ফ্লাইওভার (এলিভেটডের এক্সপ্রেসওয়ে)। এটার ওপর দিয়ে আসার সময় একটা এক্সিট দেখলাম না। এত বড় ফ্লাইওভারে মিনিমাম ১০টা এক্সিট দেওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামের লোকেরা বলে একজন ব্যক্তির জন্য টানেল করা হয়েছে যেন সে বাড়ি থেকে এয়ারপোর্টে যেতে পারে। আরেকজন ব্যক্তির জন্য ফ্লাইওভার করা হয়েছে তার বাসা থেকে যেন এয়ারপোর্টে যেত পারে। একটা রাষ্ট্র তার উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছে একটা লুটপাটের মডেল দিয়ে। তাহলে কিভাবে এটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে যায়? কারণ কথা ছিল রিপাবলিক করার। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা টাকা-পয়সা যে আপনি খরচ করবেন এটা মানুষের জন্য হতে হবে।’

সিডিএ’র প্ল্যান কোথায়— প্রশ্ন রেখে এবি পার্টির এ নেতা বলেন, ‘সিডিএ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে দেখি। চট্টগ্রামে বন্যা তো দেখিনি। সেই চট্টগ্রামে এখন প্রতিবছর অসম্ভব রকমের ঘাপলা মারা বন্যা হয়। এমনকি আপনাদের সাবেক মেয়রের বাসার নিচতলা নাকি ডুবে গেছে। তাহলে আপনি কি প্ল্যান করলেন? বন্যা হচ্ছে কেন? আপনাদের এখানে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুধুমাত্র দিন-তারিখ কারেকশন করতে গিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এই টাকাগুলো খেয়ে ফেলেছে। তাহলে সিডিএ’র প্ল্যান কোথায়? এখানে তো উন্নয়ন নয়, শুধু ভোগান্তি দেখতে পাচ্ছি। কারণ আমি যে রিপাবলিক মডেলের রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলাম এটার সাথে যায় না। যে উন্নয়ন প্রকল্প করলে মাসের পর মাস মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকে সেই প্রকল্পে কোনো ইনসাফ নাই।’

চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র করলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত থেকে এসে যারা চট্টগ্রামের এক ইঞ্চি মাটিতে হাত দেবে তাদের কারো চোখ থাকবে না, হাতও থাকবে না। জুলাই-আগস্টের পরিবর্তনের পরে এই কলকাতা নিয়ে যাওয়া, চিকেন নেকের গল্প মনে করিয়ে দেওয়া, ফেনী নদীর ওপারে কেটে চট্টগ্রাম আলাদা করে নিয়ে যাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঝামেলা চলছে…। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ যেকোনো মূল্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আত্মমর্যাদা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। সেজন্য দেশের প্রত্যেকটা পরতে পরতে যদি রিভাইজ করতে হয় আমরা করবো।’

‘যারা বাংলাদেশের চিকেন নেক নিয়ে খেলছে তাদের ভূ-রাজনীতির জ্ঞান আবার নতুন করে পড়াশোনা করতে হবে। কয়েকশত বছর আগের পুরাতন নীলক্ষেতের বস্তাপচা গাইড বই পড়ে যদি মনে করেন, বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে হাত দেবেন তাহলে অনেকবার ভেবে দেখা উচিত। এবি পার্টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আত্মমর্যাদা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপোষহীন’ —যোগ করেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।

দেশে নতুন জেনারেশনের রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সম্মান এবং মর্যাদার বিষয়। এটাকে আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখবো। আমাদের রাজনীতির ভিত্তি হবে নাগরিক অধিকার। আমরা রাষ্ট্রটিকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। প্রথম রিপাবলিকের আকাঙ্খা ব্যর্থ হয়েছে। যে মিথ্যা সাবকবলা দলিল করে আমার রাষ্ট্রটাকে ফ্যাসিবাদে তার নিজের নামে কিনে-বেচে দিয়েছে; সেই জায়গাতে আমরা বোধ করছি একটা নতুন জেনারেশন পলিটিক্স দরকার। যে কারণে জুলাই অভ্যুত্থানের নায়করা দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা বলছে। এবি পার্টির রাজনীতি হচ্ছে সেবা ও সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। যেটা আমরা ইউরোপে দেখে এসেছি।’

দেশে রিপাবলিক বন্দোবস্ত করা হয়নি জানিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘ডেঙ্গু মশায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। কেন রাষ্ট্র সিম্পল ডেঙ্গু মশা ডিল করতে পারছে না? এটা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতে বিতর্ক হওয়া দরকার। এটা কিভাবে রোধ করা দরকার তার কোনো আলোচনা এখানে নেই। টানেল করতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টানেলের প্রতিদিনের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৩৭ লাখ টাকা। আয় হয় ১০ লাখ টাকারও কম। আমি যে পরিমাণ গাড়ি দেখলাম, আপনি সারাদিন টোল তুললেও লাখ টাকা ক্রস করার সুযোগ নেই। তাহলে আপনি একটা প্রজেক্ট করেছেন রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে এটা কি বেনিফিট দিচ্ছে? ব্রিটেনে থাকার সময় একটা বাগান করলেও স্থানীয় প্রশাসনকে বলতে হয় এটা করলে কত টাকা ট্যাক্স পাবে, কতজন লোকের চাকরির ব্যবস্থা হবে। অতএব আপনার একটা পরিবেশগত, রাজস্ব, কমিউনিটি এবং রাজনৈতিক এসেসমেন্ট থাকবে। সেটার বন্দবস্ত নেই।’

উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে নাগরিকরা জড়িত করার দাবি জানিয়ে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, ‘আমার রাষ্ট্রটা যে একটা রাজবংশে পরিণত হয়েছে, কিছু ব্যক্তি, কিছু পরিবারের লীলা খেলায় পরিণত হয়েছে; এই রাষ্ট্রের বদলা চাই আমরা। একটা বন্দোবস্ত চাই আমরা। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের এসেসমেন্ট হতে হবে। কোনো প্রকল্পে নাগরিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দেশের বাইরে ফায়ার সার্ভিসের অফিস বন্ধ করতেও প্রস্তাবনার ব্যাপারে টাউনহল মিটিং হয়। বাংলাদেশের টোটাল উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে নাগরিকরা জড়িত নয়। মানুষ এবং নাগরিক অধিকার এই প্রত্যেকটা কাজের কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। এটাই নতুন প্রজন্মের রাজনীতি।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম নগরের আহ্বায়ক অ্যাডোভোকেট গোলাম ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবুল কাশেম, অর্থ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম প্রমুখ।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss