spot_img

২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণার চূড়ায় চট্টগ্রামের বাবর আলী

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অন্নপূর্ণা-১ এ বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন চট্টগ্রামের বাবর আলী। আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে তিনি চূড়ায় পৌঁছান।

গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন এই অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। এই অভিযানের আউটফিটার মাকালু অ্যাডভেঞ্চার এর সত্ত্বাধিকারী মোহন লামসাল এর সূত্রেই এই তথ্য প্রাপ্তি। এছাড়াও অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে বাবরের সাথী ছিলেন ক্লাইম্বিং গাইড ফূর্বা অংগেল শেরপা।

বাবরের সংগঠন এবং এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে আজ সোমবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন স্রষ্টা। প্রকৃতিমাতা বিমুখ হননি। বঙ্গ সন্তান বাবরকে ক্ষণিকের জন্য নিজের চূড়ায় দাঁড়াতে দিয়েছে অন্নপূর্ণা। বিশ্বের দশম শীর্ষ পর্বত এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ২৬,৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ এর শীর্ষে প্রথমবার উড়লো আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। খানিক আগে আউটফিটার কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী আমাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া আরও জানা গেছে যে বাবর আলী সুস্থাবস্থায় ক্যাম্প-৩ তে নেমে এসেছে। যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। বাবরকে আজ নেমে আসতে হবে ক্যাম্প-২ এর নিরাপত্তায়। আর আগামীকাল নামতে হবে বেসক্যাম্পে। আর জানেনই তো চড়ার চেয়ে নামা অধিক ঝুঁকির। ওই বিপদ সংকুল এলাকাতে যোগাযোগ সম্ভব নয়। তাই শীর্ষের ছবি ও ভিডিও প্রাপ্তি আপাতত সম্ভব নয়। তাই বাবরের নিরাপদ অবতরণের জন্য চলুক প্রার্থনা। এরপরই হবে উৎসব।’

বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালে গিয়েছেন ২৪ মার্চ। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ২৬ মার্চ কাঠমান্ডু থেকে বিমানে উড়ে যান পোখারা। এরপর কিছু পথ গাড়িতে ও বাকি পথ পদব্রজে ২৮ মার্চ পৌঁছে যান বেসক্যাম্পে। অন্নপূর্ণাতে সবকিছুই বেশ দ্রুতলয়ে ঘটে। একদিন বিশ্রাম নিয়েই পরদিন চড়তে শুরু করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নিতে। ক্যাম্প-১ (৫২০০ মিটার) এ দুই রাত এবং ক্যাম্প-২ (৫৭০০ মিটার) এ এক রাত কাটিয়ে ২ এপ্রিল বাবর নেমে আসেন বেসক্যাম্পে।

সাধারণত এই সময় শুরু হয় ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষার পালা। কিন্তু বাবর নেমে এসেই জানতে পারেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে ভালো আবহাওয়া থাকবে পরদিন থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম আগেই একবার ফিরে এসেছে ৭৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে খারাপ অবস্থার জন্য। ওই দলের প্রধানতো ফেসবুক পোস্টে বলেই বসেন যে, ক্যাম্প-২ থেকে ক্যাম্প-৩ এ যাবার পথের এতো খারাপ অবস্থা তিনি আগে কখনোই দেখেননি। তবুও ২ এপ্রিল ওই দল রওনা করে বাকি পথ তৈরি করতে। এই সম্ভাব্য ভালো আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে মাত্র ২৪ ঘন্টা বিশ্রাম নিয়েই বাবর আবার চড়তে শুরু করে ৩ এপ্রিল। ওইদিন ক্যাম্প-১ এ থেমে পরদিন উঠে আসে ক্যাম্প-২। এর মাঝেই শুরু হয় বিপত্তি। বিকাল থেকেই হঠাৎ শুরু হয় তুষারঝড়। দীর্ঘ যোগাযোগহীনতার পর স্বস্তির সুবাতাস জানান দেয় যে ৫ এপ্রিল বাবর পেরিয়ে গেছে কঠিন অংশ, পৌঁছে গেছে ক্যাম্প-৩ (৬৫০০ মিটার)। সাধারণত ৭৪০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-৪ তৈরি করে সামিট পুশ শুরু হলেও সিদ্ধান্ত হয় অবস্থার প্রেক্ষিতে এই ক্যাম্প বাদ দিয়ে ক্যাম্প-৩ থেকেই শুরু হবে চুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা, অর্থাৎ ওই উচ্চতায় একটানা ১৬০০ মিটার পথ দিতে হবে পাড়ি। চূড়া পর্যন্ত পথ তৈরি এবং আবহাওয়ার উন্নতির জন্য ক্যাম্প-৩ এ অতিরিক্ত একদিন অপেক্ষা করে ৬ এপ্রিল রাতে ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাবর বেরিয়ে পরেন। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম সামিট পর্যন্ত পথ তৈরি করতেই ভোরে শীর্ষে উঠে আসেন বাবর আলী। পরবর্তী পরিকল্পনা হলো আজই তিনি নেমে আসবেন ক্যাম্প-২ এ। সেখানে রাতটা কাটিয়ে আগামীকাল নেমে আসবেন বেসক্যাম্পের নিরাপত্তায়।

অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘গত বছর এভারেস্ট-লোৎসে সামিটের পর এবার অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে পৌছানোর মাধ্যমে বাবর আলী বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। ওর কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস অধ্যবসায়ের প্রতিফলন এই সাফল্য। আমরা আশা করি এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমাদের ইচ্ছা ছিল এবার বাবরকে একসাথে তিন পর্বতে পাঠাব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের একটি পর্বতেই থামতে হয়েছে। আশা করছি এমন সাফল্যের পর বাবরের আগামীর পদাযাত্রা পৃষ্ঠপোষকদের কল্যাণে আরেকটু সুগম হবে। কারণ বাবরের লক্ষ্য এই তিনটিতেই থামা নয়, ১৪টি আটহাজারী শৃঙ্গের সবক’টিতেই লাল-সবুজের পতাকা উড্ডয়ন।’ উল্লেখ্য যে, এই দুঃসাহসিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার্স লিঃ, ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লিঃ, এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এবং ব্লু জে।

নেপালের গন্ডকিতে অবস্থিত অন্নপূর্ণা পর্বত স্থানীয়দের কাছে ফসলের দেবী হিসেবে পূজনীয়। এর মূলত চারটি চূড়া আছে। যার মধ্যে শীর্ষ হলো পৃথিবীর দশম শীর্ষ পর্বত ৮,০৯১ মিটার (২৬,৫৪৫ ফুট) উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১। উচ্চতায় দশম হলেও কিন্তু কৌশলগতভাবে অন্যতম কঠিন পর্বত হিসেবে বিবেচিত এই পর্বত একদিকে আছে শীর্ষে। এর সফল সামিটের বিপরীতে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪%, যা ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিল ৩২%! অর্থাৎ গত মৌসুম পর্যন্ত এই পর্বত সামিট করেছেন ৫১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৩ জন। ১৯৫০ সালের ৩ জুন ফ্রান্সের এক দলের মরিস হেরজগ এবং লুইস লেচেনাল এই পর্বত চূড়া প্রথম স্পর্শ করেন, যা যেকোনো আট হাজারি শৃঙ্গে প্রথম মানব সাফল্যও বটে। ওই হিসেবে এই বছরই অন্নপূর্ণা-১ প্রথম সামিটের প্ল্যাটিনাম জুবিলি। অথচ এই ৭৫ বছরের মধ্যে ২০০৯ সালে অন্নপূর্ণা-৪ এ একবার বাংলাদেশি অভিযান হলেও অন্নপূর্ণা-১ এ এটিই প্রথম অভিযান এবং প্রথমবারেই এলো সাফল্য।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss