সম্প্রতি পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ করেছেন পর্বতারোহী বাবর আলী।গত ৭ এপ্রিল নেপালে অবস্থিত ২৬,৫৪৫ ফুট উচ্চতার এই পর্বত আরোহণ করেন বাবর। অভিযান শেষে ১৫ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন তিনি।
এই উপলক্ষে বাবরের ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ কর্তৃক আজ এক সংবাদ সম্মেলন এবং জাতীয় পতাকা প্রত্যর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রামের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রাম মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলী বলেন, ‘পৃথিবীতে ৮ হাজার মিটার কিংবা ততোধিক উচ্চতার ১৪টি পর্বত আছে। আমি ধীরে ধীরে সবগুলোতেই আরোহণ করতে চাই। এরই ধারাবাহিকতায় গতবছর এভারেস্ট এবং লোৎসে এবং এবার অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে গিয়েছি। অন্নপূর্ণা দশম সর্বোচ্চ পর্বত হলেও টেকনিক্যালি দুনিয়ার অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। এমন একটা পর্বত এত কম সময়ের মধ্যে আরোহণ করতে পারাটা নিঃসন্দেহে আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে’।
অন্নপূর্ণা পর্বত এর খাড়া ঢাল, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া আর তুষারধস প্রবণতার জন্য বিখ্যাত। বাবর পুরো অভিযানে এসব কীভাবে সামাল দিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করেন ক্লাবের সভাপতি এবং অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান।
তিনি বলেন, ‘বাবর তিনটি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত যেভাবে সামলেছে, বিশেষত অন্নপূর্ণা, এতে আমরা আশাবাদী যে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে শীঘ্রই সবক’টি আট হাজার মিটার শৃঙ্গেই হাসিমুখে দাঁড়াতে পারবে। এই কীর্তি কিন্তু নেপালের শেরপারা বাদে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র পাকিস্তানের একজনেরই আছে।
১৯৫০ সালে প্রথম আট হাজারী পর্বত হিসেবে সামিট হয় অন্নপূর্ণা। আর এই ৭৫ বছরে সবগুলো আট হাজার মিটার পর্বত সামিটের কীর্তি আছে সমগ্র বিশ্বের মাত্র ৭১ জন পর্বতারোহীর ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাবর আরো বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল নিঃসন্দেহে ক্যাম্প-২ থেকে ক্যাম্প-৩ এর পথ। এই পথের খাড়া ঢাল বেয়ে সব সময় তুষারধস, পাথর খসে পড়া চলতেই থাকে। এসবকে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে এড়িয়ে পর্বতারোহীদের আরোহণ করতে হয়।
এছাড়া সামিট পুশ (সর্বশেষ ক্যাম্প থেকে চূড়া পানে যাত্রা) আমাদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। ৬৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩ নম্বর ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৭০০ মিটার একটানা আরোহণ করে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে সতেরো ঘন্টা। আর ফিরতি পথে সময় লেগেছে আরো নয় ঘন্টা। সাড়ে ছাব্বিশ ঘন্টার এই সামিট পুশ শরীরের শেষ শক্তিটুকুরও পরীক্ষা নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি জীবনে পর্বতারোহণসহ ছোটো-বড়ো নানান অ্যাডভেঞ্চার করেছি। তবে অন্নপূর্ণা-১ পর্বতের মতো কঠিন পরীক্ষা পূর্বে আমাকে দিতে হয়নি। তবে এতকিছুর পরও ঠিকঠাকভাবে আরোহণ করে দেশে আপনাদের মাঝে ফিরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। পৃষ্ঠপোষকসহ বাকি সবার সহযোগিতা পেলে বাকি আট হাজারি মিটার পর্বতগুলোতে আমার পদচারণা অব্যাহত রাখতে পারব ৷
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, “আধুনিক বিশ্বে দেশকে ব্র্যান্ডিং করার অন্যতম মাধ্যম হলো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, যার শীর্ষে আছে পর্বতারোহণ। এই পরিবর্তিত দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করতে বাবর হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। বাবর প্রমান করে চলেছে যে আমরা ভীতু বাঙালি নই, আমরা পর্বতের মতো দৃঢ় বাংলাদেশি।সকল পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ। আশা করি আগামীতে বর্তমান পৃষ্টপোষকদের পাশাপাশি পাব আরো নতুন প্রতিষ্ঠানকে।”
উল্লেখ্য, এই দুঃসাহসিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার্স লিঃ, ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লিঃ, এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এবং ক্লজে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রাম এর পরিচালক পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ।
আরো পড়ুন: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণার চূড়ায় চট্টগ্রামের বাবর আলী
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বাবর আলী ক্লাব কর্মকর্তাদের হাতে প্রত্যর্পণ করেন জাতীয় পতাকা, যা তার হাতে অর্পণ করা হয়েছিল ২০ দিন আগেই। ৩টি আট হাজার মিটার পর্বতে এই জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জাতিকে আনন্দে ভাসিয়েছেন বাবর। এই পর্বতারোহী স্বপ্ন দেখেন বাকি ১১টিতেও উড়বে এই লাল-সবুজ ।
চস/স
