আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিনটি মে দিবস হিসেবে পরিচিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে।’
শ্রম ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়, শ্রমের মর্যাদা ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা ছাড়া উৎপাদনশীল মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। শ্রম ও মেধা দিয়ে যে উৎপাদন, তা থেকেই সমাজ বিকশিত হয়, পুঁজি বিকশিত হয়। কিন্তু মানুষ যখন কৃষি থেকে বিচ্যুত হয়ে শিল্পে এসেছে, তখন থেকে পুঁজিপতিরা ক্ষুদ্র থেকে দ্রুতই বড় হতে শুরু করে এবং যে মানুষ কৃষক থেকে শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়েছে, তারা সত্যিকার অর্থে সর্বহারা শ্রেণি হিসেবে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে মে দিবস।
১৯৮৬ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল আন্দোলন। আচমকা পুলিশের উদ্দেশ্যে বোমা ছুঁড়ে কোনো এক অজ্ঞাতনামা। জবাবে নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর বর্বর হামলা চালায় পুলিশ। আন্দোলন দমাতে তারা গুলি করলে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন বহু শ্রমিক। পরে গ্রেফতার ছয় শ্রমিককে প্রহসনের বিচারে ফাঁসিও দেয়া হয়। এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। অবশেষে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রথম কংগ্রেস। সেখানে পরের বছর থেকে শিকাগো ঘটনার বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব রাখেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালে দ্বিতীয় কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় এই প্রস্তাব।
অবশ্য ১৮৯৪ সালের মে দিবসে ঘটে দাঙ্গা। এরপর ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত হয় একটি প্রস্তাব। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।
সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের আশঙ্কা না থাকলেও বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশ এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায়; সেটি কার্যকরও করা হয় কয়েকটি দেশে।
বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ‘শ্রম দিবস’ পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা।
চস/স


