spot_img

২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

নির্বাচন ও গণভোট একদিনে করা সুস্পষ্টভাবে বিএনপির স্বার্থে: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ না করে সরকার যে নতুন প্রক্রিয়ায় গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তা সুস্পষ্টভাবে বিএনপির স্বার্থে করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের মত, কমিশনের পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞদের সুপারিশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সরকার এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গণভোটকে গুরুত্বহীন করে তুলবে এবং সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রাজধানীর মগবাজারে আন্দোলনরত ৮ দলের নেতৃবৃন্দের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশন প্রথম থেকেই একটি প্যাকেজে, এক সেটে গণভোটের প্রশ্ন তুলে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল। কিন্তু সরকার সেই প্যাকেজকে চার ভাগে ভাগ করেছে—যা জনগণের কাছে বিভ্রান্তিকর এবং ভোটের দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কঠিন করে তুলবে। এতগুলো পয়েন্ট নিয়ে বিশ্লেষণ করে সাধারণ মানুষের পক্ষে মত স্থির করা কঠিন হবে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে গণভোট মূল ইস্যু না থাকে, বরং বিভক্ত হয়ে যায়।

জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে কমিশনের পরামর্শও সরকার উপেক্ষা করেছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নোট অব ডিসেন্ট কেবল ভিন্নমত প্রকাশের একটি নথি—এটি গণভোটের প্রশ্নে পৃথকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার বিএনপিকে সন্তুষ্ট করার জন্য সেই নোট অফ ডিসেন্টকে সুবিধাজনক করার লক্ষ্যে প্যাকেজটি চার ভাগে ভাগ করেছে। তিনি বলেন, এটা একেবারেই আইনবিরোধী ও অপ্রচলিত। এটি একটি বিশেষ দলকে অযৌক্তিকভাবে একোমোডেট করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

তাহের বলেন, কমিশন স্পষ্টভাবে সুপারিশ করেছিল—গণভোট পাস হলে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংস্কারগুলো সাংবিধানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য থাকবে, নইলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু সরকার সেই বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে আবারও বিএনপির আপত্তিকেই মান্য করেছে। এক্সপার্টরা বলেছেন, ‘করতে হবে’ মানে শক্তিশালী বাধ্যবাধকতা নয়; বরং আদালতের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল। সরকার যেটা করেছে, তাতে সংস্কার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দুর্বল হয়ে গেল।

তিনি বলেন, সরকার স্পষ্টতই বিএনপির চাপে পড়েছে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার মাধ্যমে। তাহের বলেন, সাম্প্রতিক বেসরকারি সার্ভেগুলোতে ৮০ শতাংশ মানুষ গণভোট আলাদা চায়—কারণ গণভোট সংস্কারের প্রশ্ন, আর জাতীয় নির্বাচন সরকার বেছে নেওয়ার প্রশ্ন—এই দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। একই দিনে হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে। দলগুলো তাদের নিজস্ব প্রার্থীর প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবে। খুব কম মানুষ গণভোটে ভোট দেবে। পরে বলা হবে—যেহেতু ভোট কম হয়েছে, জনগণ সংস্কার চায়নি।

ডা. তাহের বলেন, একই দিনের ভোটের মাধ্যমে একটি বিশেষ দল আগেই নিজেদের সম্ভাব্য নেতিবাচক রায় থেকে রক্ষা পেতে চায়। সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে তরুণদের ভোট একটি দলের বিরুদ্ধে গেছে, এবং গণভোট আলাদা দিনে হলে সেই দল বিপর্যস্ত হতে পারে—এ আশঙ্কায় তারা গণভোটের আলাদা দিন মানতে রাজি নয়।

ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকার বর্তমানে নিরপেক্ষতার অবস্থান থেকে সরে গেছে এবং প্রশাসনে দলীয় প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিছু উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দল প্রশাসনে তাদের অনুগত লোক বসানোর চেষ্টা করছে, সৎ ও নিরপেক্ষ বলে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চালালে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। গত ১৫ বছরের মতো আরেকটি নিয়ন্ত্রিত ও পূর্বনির্ধারিত নির্বাচন জাতিকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের তিনজন উপদেষ্টা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন এবং একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। আট দল এই উপদেষ্টাদের অপসারণ দাবি করেছে। তিনি জানান, নাম প্রকাশ না করলেও তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা হস্তান্তর করবেন। আট দল আগের মতোই ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন চায় এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss