spot_img

৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

আরব আমিরাতে যাচ্ছে ওয়েস্টার্ন মেরিনের তৈরি ৩টি ল্যান্ডিং ক্রাফট

দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ধারাবাহিক সাফল্যের আরেকটি নতুন অধ্যায় যোগ হলো ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের হাত ধরে। প্রতিষ্ঠানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আরও তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট—‘মায়া’, ‘মুনা’ এবং ‘এসএমএস এমি’—রপ্তানির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রামের পটিয়াতে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের সামনে নোঙ্গরকৃত জাহাজে আয়োজিত জাহাজ ডেলিভারি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল্লাহ আলি আব্দুল্লাহ খাসাইফ আলহমৌদি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান, মারওয়ান শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি এলএলসি–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ মোহাম্মদ হুসাইন আল মারজুকি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব, কোস্ট গার্ড ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল হামুদি বলেন, বাংলাদেশের একটি বড় ও সক্ষম জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ইউএই-এর জন্য তিনটি নতুন ল্যান্ডিং ক্রাফট নির্মাণ—এটি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন এবং ইউএই-এর মারওয়ান শিপিংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ভবিষ্যতে সামুদ্রিক খাতে আরও বড় আকারে বিস্তৃত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান বলেন, আজ এখানে এসে আমি দেখলাম যে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাত যুক্ত হওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাস্কেটে জাহাজ নির্মাণ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ওয়েস্টার্ন মেরিন ধারাবাহিকভাবে বিদেশে জাহাজ রপ্তানি করছে—এটি দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ খুব অল্পসংখ্যক দেশের একটি যারা এ ধরনের বড় জাহাজ নির্মাণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর বড় চাহিদা রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় জাহাজ রপ্তানির সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করবে—আমি নিশ্চিত।

শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই জাহাজগুলোর পিছনে যারা দিন-রাত শ্রম দিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের গর্ব। আমাদের দক্ষ কর্মশক্তি এই শিল্পকে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নেবে।

বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বন্দর, নৌ বাহিনী, কাস্টমস, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের রপ্তানিতে পাশে থাকার আহ্বান জানান।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান জানান, ২০২৩ সালে মারওয়ান শিপিংয়ের সঙ্গে আটটি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি হয়। এর মধ্যে ‘রায়ান’ নামের একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং ‘ঘায়া’ ও ‘খালিদ’ নামের দুটি টাগবোট ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। আজকের তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট হস্তান্তরের মাধ্যমে শুধু ২০২৫ সালেই ইউএইতে ছয়টি জাহাজ রপ্তানি হলো। বিউরো ভেরিটাসের তত্ত্বাবধানে নির্মিত প্রতিটি জাহাজের দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার এবং গ্রস টোনেজ প্রায় ১,৪০০ টন।

ক্যাপ্টেন সোহেল আরও বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ, অদক্ষ বিপুল মানবসম্পদ রয়েছে—যা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আমাদের জন্য বিশেষ সুবিধা। বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ এখন শক্ত প্রতিযোগি। ওয়েস্টার্ন মেরিন ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি দেশে মোট ৩৬টি জাহাজ রপ্তানি করেছে, যার বাজারমূল্য ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশের রপ্তানি বৈচিত্র্যে বড় ভূমিকা রাখছে। উচ্চমূল্যের ভারী শিল্প হিসেবে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শহিদুল বাশারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যদের মধ্যে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাসের কর্মকর্তা আলহানতুবি সাঈদ আলি আলিখেসাইফ, মারওয়ান শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ মোহাম্মদ হুসাইন আল মারজুকি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের পরিচালক শাহ আলম এবং আবু মো. ফজলে রশীদ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জোনার কমান্ডার প্রমুখ।

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss