spot_img

২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অনলাইন ডেস্ক

সর্বশেষ

চট্টগ্রামে এইডসের ‘গুপ্ত বাহক’ প্রবাসীরা!

চট্টগ্রামে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণের ‘অদৃশ্য’ বড় উৎস হয়ে উঠছে বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- এই অঞ্চলে শনাক্ত হওয়া রোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশই প্রবাসী, বিদেশফেরত শ্রমিক বা তাদের স্ত্রী-সন্তান। – খবর দৈনিক পূর্বকোণের

চিকিৎসকরা বলছেন, বিদেশে অবস্থানকালে ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ, দেশে ফেরার পর পরীক্ষা না করা এবং সচেতনতার অভাবই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব ব্যক্তিদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

চমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত (নভেম্বর-২২ থেকে অক্টোবর-২৫) এ তিন বছরে এ সেন্টারটিতে এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২১৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। এর মধ্যে ২০২৩ সালে আক্রান্ত ৫৮ জনের মধ্যে ২২ জনই ছিলেন প্রবাসী। যা ওই বছরের মোট শনাক্তের ৩৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ জনে এবং ২০২৫ সালে ৭৫ জন। সর্বশেষ বছরের তথ্য বলছে- শুধু ২০২৫ সালেই নতুন করে ২০ জন অভিবাসী এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের পাশাপাশি স্বামী থেকে স্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২ জনের, আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে (২৬ জন)। এছাড়া পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জন। স্বামী থেকে স্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ১২ জন, সাধারণ জনগণ ২৬, অভিবাসী ২০ জন এবং একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন যৌনকর্মী ও শিশু। সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিতেও অভিবাসীরা এগিয়ে। ২০২৩ সালে মারা যাওয়া ২৭ জন রোগীর মধ্যে ১৫ জনই (৫৫%) ছিলেন প্রবাসী। ২০২৪ সালে মৃত্যু হয় ১১ জনের এবং ২০২৫ সালে ১৩ জনের। তাদের মধ্যে বিদেশ ফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন খুব খারাপ পরিস্থিতিতে। যার ফলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই অনেকে মারা যাচ্ছেন। প্রবাসে অবস্থানরতদের ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকা এবং বিদেশে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং না হওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন তারা।

চমেকের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. জুনায়েদ মাহমুদ খান বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ এবং দেশে ফিরে পরীক্ষা না করা- এ দুই কারণে এই অঞ্চলে অভিবাসী থেকে সংক্রমণ বাড়ছে। গত এক বছরে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। অথচ আগেভাগে আসলে এমন পরিণতি হতো না। আগে এলে প্রাণহানি কম হতো। আক্রান্ত মৃত্যুর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমাতে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্যপরামর্শ (কাউন্সেলিং) এবং দেশে ফিরে পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবার ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। তাদের মতে, সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিলে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান রাহাত বলেন, কয়েক বছর ধরে অভিবাসীদের মাধ্যমেই নতুন রোগী বাড়ছে। বিদেশ ফেরত, তাদের স্ত্রী এবং সন্তানরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। সচেতনতার অভাব ও পরীক্ষা না করানোই প্রধান সমস্যা। জনসচেতনতা বাড়ালে ও তথ্য গোপন না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

এইডস ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম, রোগী বেশি পাঁচ এলাকায়: জাতীয় পর্যায়ের তথ্যে দেখা যায়, দেশের ২৩টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার তালিকার উপরে রয়েছে চট্টগ্রাম। জাতিসংঘের হিসাবে দেশে ১৩ হাজার ২০০ জন এইডস রোগী থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এএসপি গ্রোগ্রামে নিবন্ধিত রোগী ৫ হাজার ৮৬৫ জন।

চট্টগ্রামে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা হলেও, আক্রান্তদের উৎস বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে- এ ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান বাহক বিদেশফেরত শ্রমিকরা। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, সাতকানিয়া ও সীতাকুণ্ডে। এ ছাড়া কক্সবাজার, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও রোগী পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তথ্য গোপন, ভ্রান্ত ধারণা ও সামাজিক লজ্জাই শনাক্তের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সূত্র: পূর্বকোণ

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss