‘রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা/হাসির কথা শুনলে বলে/হাসব না-না, না-না!’ শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম উপহার দিয়ে অমর হয়ে আছেন সুকুমার রায়।
বাংলা ভাষায় ননসেন্স এর প্রবর্তক এই লেখকের কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি সবকিছুতেই ছিল মজার ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস। এই প্রতিভাবান মানুষটির ১৩৪তম জন্মদিন আজ।
দেখা যায়, তিনি কথা-কবিতায় হাস্যরসের মধ্য দিয়ে সমাজচেতনার দিকেই পাঠককে নিয়ে গেছেন।
সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতায়। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যনুরাগী। বাবা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল।
আবার পুত্র সত্যজিৎ রায়ও খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার। সত্যজিৎ রায় লেখালেখিতে পিতার মতই অলংকরণে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সত্যজিৎ তার লেখা ‘ফেলুদা’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু’ সিরিজের প্রায় সবকটি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ নিজেই করেছিলেন।
সুকুমার রায় অল্প বয়স থেকেই মুখে মুখে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকার সঙ্গে ফটোগ্রাফিরও চর্চা করতেন। কলেজ জীবনে তিনি ছোটদের হাসির নাটক রচনা এবং তাতে অভিনয় করতেন।
তার ছড়া পড়া হয়নি, এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই। মজা এবং উপমা হিসাবে তার ছড়াগুলোর দু-চার লাইন অনেকেরই আয়ত্বে। শিশুতোষ পাঠ্যে তার কোন না কোন ছড়া আছেই।
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার/সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিসনে আর খবরদার!/ অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?/ বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় গো গর্দভ!
কিংবা ষোলা আনাই মিছে ছড়ার- খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে/ বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!/ মাঝিরে কন, একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি/ ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?/ মাঝি শুধায়, সাঁতার জানো? – মাথা নাড়েন বাবু/ মূর্খ মাঝি বলে, মশাই, এখন কেন কাবু?/ বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে/ তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে।
কিংবা- চলে হনহন/ ছোটে পনপন/ ঘোরে বনবন/ কাজে ঠনঠন।
তার ননসেন্স ছড়া – মাসী গো মাসী পাচ্ছে হাসি/ নিম গাছেতে হচ্ছে সিম,/ হাতির মাথায় ব্যাঙের বাসা/কাগের বাসায় বগের ডিম। -এমন অনেক অনেক ছড়া আমাদের অনেকেরই জানা।
বেঁচেছিলেন মাত্র মাত্র ছত্রিশ বছর। ১৯২৩ সালে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বয়সে একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ রায় এবং স্ত্রীকে রেখে প্রয়াত হন। এই স্বল্পায়ু জীবনে তিনি যা রেখে গেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখবে।
চস/আজহার