spot_img

১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার
২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

হাত পাখা

প্রচন্ড রোদ, শরীর থেকে অনবরত ঘাম ঝরছে। রাস্তায় জ্যাম। আমি মোটর সাইকেলে বসে আছি। ডানে বামে দেখছি। আমার একটু দূরে একটা মহিলা বসে আছে। তার কোলে একটা বাচ্চা। দেখে মনে হচ্ছে মহিলাটির কোনো থাকার স্থান নেই। কাগজের ঢাল দিয়ে বাচ্চাটিকে বাতাস করছে। বাচ্চাটি তবুও কাঁদছে। বাচ্চাটির বয়স আনুমানিক ২ বছর। তার কমও হতে পারে। আমিও তাকিয়ে আছি মনোযোগ দিয়ে। এতটাই মনোযোগ দিয়েছি যে রাস্তার জ্যাম ছুটে গেছে কিন্তু আমার মনোযোগ ছুটে না। এদিকে প্রচন্ড গরমে আমার শরীর ঘেমে গেছে। বলাযায় শার্ট ভিজে গেছে। এবার আন্দাজ করতে পারেন গরমের তাপ কতটা ছিলো। যাইহোক আমার মনোযোগ ছিলো মহিলাটির দিকে। মহিলাটি দেখতো খুবই রোগা ছিলো। তার সন্তানকে সে ঢাল দিয়ে বাতাস করলেও সন্তান কাঁদছে। এমনভাবে কাঁদছে যা মহিলাটিও সহ্য করতে পারছে না। তাই মহিলাটিও কাঁদছে। একটু পর আমি লক্ষ্য করলাম মহিলাটি তার বাচ্চাকে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে বাতাস করছে। এবার মনে হচ্ছে বাচ্চা একটু শান্ত হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে মহিলাটিও গরমে অতিষ্ঠ। তার চোখেমুখে ভেসে উঠছে যন্ত্রণার ছায়া। আমি তখনও নিশ্চুপভাবে দেখছি। মনে মনে ভাবছি কি করতে পারি? এর মধ্যে ভাবছি, আমরাতো হরহামেশা মানবতা, মনুষ্যত্ব নিয়ে আলোচনা করি। বাস্তবে সেটা কতটুকু পালন করি! এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। গাড়ি থেকে নেমে মহিলাটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মহিলাটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মানে টাকা চাইছে।
আমি তখন বললাম, এই নেন ১০০ টাকা। একটা হাত পাখা কিনে বাচ্ছাকে বাতাস কইরেন।
মহিলাটি অনেক খুশি হয়ে জবাব দিলো, ঠিক আছে বাবা। কিন্তু মহিলাটি হাত পাখা কিনবে না। কারণ সারাদিন ভিক্ষা করে যা টাকা পায় তা দিয়ে তার আর তার বাচ্চা খাবারের খরচ হয় না। হাত পাখা কনবে কোন সুখে! এমন চিন্তা আমার ভেতরও চলছে। তখন আমিও বাণিজ্য মেলায় যাচ্ছি। যাওয়ার সময় ভাবলাম, মহিলাটির জন্য একটা হাত পাখা কিনবো। বাসায় যাওয়ার সময় দিয়ে যাবো। যে-ই ভাবা, সেই কাজ। মেলায় গিয়ে একটা সুন্দর হাত পাখা নিলাম। দাম ২৪০ টাকা। এটা ছোট করে বেগে ঢুকিয়ে রাখা যায়। তাই দামও একটু বেশি। অনেক দরদাম করে ২৪০ পর্যন্ত রাখলো। একটু আনন্দ নিয়েই যাচ্ছিলাম মহিলাটির কাছে। ভালো কিছু করছি বলেই একটু আনন্দ হচ্ছে।
কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে দেখি যে স্থানে মহিলাটিকে ১০০ টাকা দিয়েছিলাম সেখানে নেই। পুরো এলাকাটাতেই খুজেছি অনেক। প্রায় ২০-২৫ টা দোকানে মহিলাটির সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। কেউ সঠিক কিছু বলতে পারলো না। রাত যখন ১১ টা তখন বাসা থেকে বাবার ফোন আসলো। এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকি না কখনও। তাই বাবা একটু বকাও দিলো। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দিলাম। সেই সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত মহিলাটির খোঁজ করেও পেলাম না। মনটা আমার বিষাদে ভরে গেলো। খুব খারাপ লাগছে। বাসয় গিয়েও মাথায় একই বিষয় নিয়ে ভাবছি। বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছে আমি চিন্তিত। তাই তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে আমাকে জিগ্যাসা করে, আমার কি হয়েছে। আমি সারদিনের কথা তাদের খুলে বলি। এরপর আমার বাবা-মা আমাকে সান্তনা দেয়। বাবা বলেন, কপালে থাকলে আবারও দেখা হবে। এটা নিয়ে চিন্তা করলে কোনো লাভ হবে না। তবুও চিন্তটা মাথায় থেকে গেলো। হাত পাখাটিও আমার ব্যাগে থেকে গেলো। আজও আমি মহিলাটিকে খুঁজি। হাত পাখাটি দিবো বলে।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss