spot_img

২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

সর্বশেষ

চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল নিয়ে বিতর্ক কেন?

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বা এনসিটির ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানিকে দেয়া হবে কি-না তার পক্ষ-বিপক্ষে বিতর্ক আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। অনেকে এ ধরনের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ আমলে এই টার্মিনাল ব্যবস্থাপনায় দুবাইভিত্তিক একটি বিদেশি কোম্পানিকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো, সেটিই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আবার গতি পেয়েছে-এমন খবরে অনেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। যদিও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে একটি সমীক্ষা এখন চলছে।

“নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে,” লিখিত জবাবে সংস্থাটি জানিয়েছে।

অন্যদিকে সরকারের নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সরকার নেতিবাচকভাবে দেখছে না।

“তবে সব অংশীজনের সাথে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তাতে বন্দরের কারও চাকরি কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হবে না,”।-বিবিসি বাংলা

এদিকে যারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের বক্তব্য হলো- নিউমুরিং টার্মিনালটি সুপার স্ট্রাকচার সমৃদ্ধ একটি আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল এবং এটি সক্ষমতার চেয়ে বেশি সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে গত বছরেও। আবার এটি স¤প্রসারণেরও সুযোগ নেই। ফলে এই টার্মিনালে আর নতুন করে বিনিয়োগের কোনো সুযোগই নেই বলে তারা মনে করেন।

সত্যিই দেয়া হচ্ছে বিদেশি কোম্পানিকে?

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাম্প্রতিক সময়ে বন্দর নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে অনেকেই ইঙ্গিত পাচ্ছেন যে নিউমুরিং টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই দেয়া হচ্ছে। বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে যে ধারণা পাওয়া গেছে তাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ড নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেয়া হতে পারে।

গত বুধবার চট্টগ্রাম গিয়ে এ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর। তাহলে যে সাইজের হৃৎপিণ্ড আছে, ওই সাইজে চলে না। এই হৃৎপিণ্ড বিশ্ব সাইজের হৃৎপিণ্ড হতে হবে।

ওই অনুষ্ঠানেই প্রধান উপদেষ্টা জানান যে তিনি নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে বলেছেন, যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে যেভাবেই হোক।

তারও আগে চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে তারা “বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর” সঙ্গে আলোচনা করছেন।

বিতর্ক কেন, বিরোধিতা কেন?

নিউমুরিং টার্মিনালে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি এনেছিলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর টার্মিনালটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে এখন আছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম বলছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এখন বৈশ্বিক ট্রেন্ড বা প্রবণতা।

“কিন্তু যে পোর্টে বা টার্মিনালে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি, সেখানে বিনিয়োগ হবে যাতে করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দিয়ে পোর্ট বা টার্মিনাল তৈরি করতে পারে। এরপর তারা সেটি পরিচালনা করে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেবে। কিন্তু নিউমুরিং পুরোদমে চলমান একটি টার্মিনাল। ফলে এখানে তারা কোথায় বিনিয়োগ করবে এবং বন্দরের দক্ষতা কতটা বাড়াবে সেটা জানানো উচিত।”

বন্দরের জেটি পরিচালনাকারী বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস ও টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী বলছেন, সরকার সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন, তবে দেখতে হবে সেটা উইন-উইন হচ্ছে কি-না।

“নিউমুরিং তো ভালো করছে। লোকসানেও সেই। বন্দর কর্তৃপক্ষও এর মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠছে। এই ব্যবস্থাপনার সুযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষ না পেলে একটা সময় পর যখন বিদেশিরা বন্দর বা টার্মিনাল হস্তান্তর করবে তখন কারা কীভাবে চালাবে,” বলছিলেন তিনি।

ওদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী কিংবা অপারেটররা অনেকে ইতিমধ্যেই বিদেশিদের হাতে নিউমুরিং না দেয়ার দাবি করেছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভও হয়েছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও’ কমিটির সদস্য শাহাদত হোসেন সেলিম বলছেন, এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসলে তারা শিগগিরই প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বন্দরের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে আত্মঘাতী এবং এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজও হতে পারে না।

“বন্দরে আধুনিক প্রযুক্তি আনা হয়েছে। দেশীয় ব্যবস্থাপনায় এটি লাভজনকও। তাহলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কেন? এর সাথে নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নও আছে। সরকারের উচিত হবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা,” বলছিলেন মি. হক।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss