spot_img

২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সোমবার
১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সভা

বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করে আলোচনার আহ্বান

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

তবে সরকার বর্ধিত মাশুল কার্যকরের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। গতকাল (১২ অক্টোবর) নৌপরিবহনসচিব বলেছেন, মাশুল কমানোর সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’–এর ব্যানারে গতকাল রোববার সভার আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে এ সভায় বিভিন্ন খাত ও সংগঠনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।

সভায় হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইল, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। দেশে ভালো ব্যবসায়ী আছে বলেই প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের এত জবাবদিহি নেই যে, বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে উঠে পড়ে লাগতে হবে! তাদের শনাক্ত করতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করব না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?

মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ট্যারিফ বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশের প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ পরিচালক এমএ সালাম বলেন, সংকট নিয়ে আজকের সভা। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম একদিনের জন্যও বন্ধ হয় নি। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দরের মাশুল এক মাসের জন্য পিছিয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দর লস করুক। আমরা এটাও চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।

বিজিপিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অফডকে নিতে চাপ দিচ্ছে। অফডক আপটুডেট হয়নি। নানা অজুহাতে দু-তিনগুণ খরচ নিতে হচ্ছে। তাই নীতিমালা করতে হবে।

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে আসছিল। আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বেপজিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, আমরা সাফার করছি বিভিন্ন কারণে। অনেক সিদ্ধান্ত আসছে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আরএমজি। বায়াররা খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজ করছে। বাংলাদেশ আরও কস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা হতাশার। বন্দরের নতুন ট্যারিফ রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব। আমরা এখনো আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি করে রূপান্তরের মাধ্যমে রপ্তানি করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না বন্দর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ১০-১৫ বছর ধরে বে টার্মিনালের কথা শুনে আসছি। আমি আশা করবো সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করবে।

বারভিডার হাবিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ড. ইউনূস। তাঁর কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। লাভে থাকার পরও কেন চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ বাড়াচ্ছে। চিটাগং চেম্বারে নির্বাাচিত নেতৃত্ব নেই বলে ব্যবসায়ীদের নানা সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তারা ব্যাংকঋণ পাচ্ছে না। ট্যারিফ দিচ্ছি ডলারে। ৮০ টাকার ডলার এখন ১২২ টাকা। এখানেই তো ট্যারিফ বেড়ে গেছে। কাউকে লাভ করানোর জন্য অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনা করবেন আশাকরি।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, আমরা বসে নেই। কাজ করছি। বিজিএমই, চেম্বারে যখন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল না তখন আমরা কাজ করেছি আপনাদের পক্ষে। ডুয়েল ডেলিভারির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি চট্টগ্রাম চেম্বারে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসবেন। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, ব্যবসায়ীদের সমস্যা নেই। সাড়ে পাঁচশ টন ডাল এনে বাজারে বিক্রি করতে পারেনি। ডিপোতে অনৈতিক চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। বন্দর, বার্থ, শিপিং, ডিপোতে যেন চার্জ বাড়ানো না হয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ আমদানি রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করি আমরা। কাজেই ব্যথা আপনাদের চেয়ে আমাদের বেশি। পোশাকশিল্পে অর্থনৈতিক চাপ আসলে লাখ লাখ নারী বেকার হবেন। আপনি বিদেশে কর কমাতে তদবির করছেন, দেশের বন্দরে কেন ট্যারিফ বাড়াবেন? আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বন্দর। এইচএস কোডের অনেক ঝামেলা আমরা সমাধান করিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান অনেক কালো আইন বাতিল করেছেন। চট্টগ্রাম লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আড়াইশ বিলিয়ন রিজার্ভ থাকত যদি লুটপাট না হতো।

সঞ্চালক এসএম আবু তৈয়ব বলেন, যুদ্ধসহ নানা টানাপোড়েনে অর্থনীতিতে ধকল যাচ্ছে। দেশে সেবাখাত ট্যারিফ বাড়িয়ে ব্যবসা দুর্বিসহ করছে। প্রতিবাদ হিসেবে আশাদের এ আয়োজন। নতুন ট্যারিফ কার্যকরের পর এ অঞ্চলের সবচেয়ে কস্টলি বন্দর হবে চট্টগ্রাম। বন্দরে আমদানি বন্ধ হলে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। ট্যারিফ বাড়িয়ে বন্দরকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। -একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার খবর

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss