spot_img

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভবনা নিয়ে ভাবনা

সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া মন্তব্য করেছেন দেশের বৃহত্তম ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবে যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন শ্রমবাজারে যেসব নতুন কর্মী প্রবেশ করছে, তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ,তাই প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বিদেশি শ্রমবাজার থেকেও দেশের আয় অন্তত দশগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা, দক্ষতা, উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত সম্ভবনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত তুলে ধরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখক ইসমাইল হোসেন-

স্বপ্ন ও বাস্তবতার দ্বন্দ্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র সুযোগ এটি হলেও, এখানকার বাস্তবতা বেশ কঠিন। সেশনজট, আধুনিক শিক্ষাদানের ঘাটতি, গবেষণার সুযোগের অভাব এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো সময়মতো না হওয়া ও ফল প্রকাশে বিলম্ব শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলে দেয়। অন্যদিকে, প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সফট স্কিল, আইটি জ্ঞান ও ইংরেজি দক্ষতা যা অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিত। তবে আশার কথা, অনেকে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসছেন দক্ষতা অর্জনে। এই বাস্তবতাকে বদলাতে হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে যুগোপযোগী পরিবর্তন, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি।

মুহাম্মদ শাফায়াত হুসাইন : অনার্স প্রথম বর্ষ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের ফারাক কমাতে হবে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীপিছু বাৎসরিক ব্যয় যেন ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, যা বর্তমানে মাত্র ৭০২ টাকা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীপিছু মাসে ৫৮ টাকা ব্যয় করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে যতজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তার মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে। বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। এসব কলেজে মোট শিক্ষার্থী ৩০ থেকে ৪০ লাখের কাছাকাছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে পড়াশোনার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন উঠছে। ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার এমন বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশের শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যবর্তী বিস্তর ফারাক। এই প্রতিবন্ধকতার দেয়াল পেরোতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। এমনকি এই প্রতিবন্ধকতার সমাধান খুঁজে না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। তারপরও এমন প্রতিবন্ধকতার অভিশপ্ত দেয়ালে আটকে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রতিবন্ধকতা থেকে শিক্ষার্থীরা আদৌ মুক্তি পাবে কি?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিবন্ধকতাজনিত কারণে আর কত শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি এবং আর কত শিক্ষার্থীর অকালে জীবন গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?

রাহমান জিকু : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সংস্কার চাই মাঠপর্যায়ে, কাগজে-কলমে নয়
বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ শিক্ষাঙ্গন। দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় বহুদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানান ধরনের অনিয়ম ও কাঠামোগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছেন। সিদ্ধান্তটি উদ্দেশ্যগতভাবে ভালো হলেও এর বাস্তবায়নে বড় ধরনের সংকট রয়ে গেছে। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অধিকাংশ কলেজেই ছাত্রাবাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পরিবহন সুবিধাও প্রদান করে না। ফলে শহরের বাইরে বা দূরবর্তী অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরা চাইলেও প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

সংস্কার কাগজে-কলমে নয়, মাঠপর্যায়ে বাস্তবসম্মত হতে হয়। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যাগুলো বুঝে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে ছাত্রাবাসের সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব মৌলিক চাহিদা পূরণ ছাড়া বাধ্যতামূলক উপস্থিতির সিদ্ধান্ত বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

সাব্বির হাসান নিরব : অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বাজিতপুর সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss