spot_img

৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সোমবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

দরপত্র জালিয়াতি: কর্ণফুলী গ্যাসের ঠিকাদার নেছার কারাগারে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ নিয়ে জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি, আলোচিত ঠিকাদার নেছার আহমদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, আদালতে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।

নেছার আহমদ কেজিডিসিএলের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মেটকো কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগেও কয়েকটি মামলায় নেছার আহমদ কারাগারে ছিলেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাহিদ আলম।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কর্ণফুলী গ্যাসের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আনিছ উদ্দিন আহমেদ শামীম (৬১), তার স্ত্রী কামরুন নাহার পলি (৫০), আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুর সিন্ডিকেটের স্বত্ত্বাধীকারী নুর মোহাম্মদ (৬২)।

মামলায় কাজ কম করে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫৩ টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং ৯ কোটি ৯৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৭৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার অভিযোগ করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা ও কার্যাদেশ প্রদানকারী হয়েও আনিছ উদ্দিন আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে, পরস্পর যোগসাজশে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের একটি দরপত্রে অংশগ্রহণ করে, বিলের কম কাজ করে পৌনে ৬ লাখ টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নিজ ও যৌথ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে ৯ কোটি ৯৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৭৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগে দন্ডবিধির ৪০৯, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আই, ২০১২ এর ৪(২) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী গ্যাসের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আনিছ উদ্দিন আহমেদ ২০১১ সালে ব্যবস্থাপক থাকাকালে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত ঠিকাদার মেসার্স মেটকো কন্সট্রাকশনের স্বত্ত্বাধীকারী নেছার আহমদ ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহান এবং আনিছ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী কামরুন নাহারকে নিয়ে রক প্রপার্টিজ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। আনিছ আহমেদের স্ত্রী কামরুন নাহারকে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং নেছার আহমদকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়। আনিছ উদ্দিন আহমদ হন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।

পরবর্তীতে ২০১২ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজের জন্য মেসার্স নুর সিন্ডিকেটের সাথে রক প্রপার্টিজ চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে মেসার্স নুর সিন্ডিকেটের পক্ষে মালিক নুর মোহাম্মদ এবং রক প্রপার্টিজের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেছার আহমদ স্বাক্ষর করেন। ওই কাজের জন্য মেমার্স নুর সিন্ডিকেটকে প্রাপ্ত বিলের ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিশন বাবদ প্রদানের চুক্তি হয়। ওই কাজের বিল প্রত্যয়ন ও অনুমোদনকারী কর্মকর্তা হলেন কর্ণফুলী গ্যাসের ওই কর্মকর্তা আনিছ উদ্দিন আহমেদ। ওই কাজের বিল প্রদান করেন আনিছ উদ্দিন আহমেদ।

অবৈধ চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর সিন্ডিকেট বিলের চেক নগদায়ন করে নিজের কমিশন রেখে দিয়ে অবশিষ্ট বিলের অর্থ মো. আনিছ উদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন ‘রক প্রপার্টিজ’ নামের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন।

অনুসন্ধানকালে দুদক জানতে পারে, প্রথমে ডাকা দরপত্রে সর্বনিম্ন আহ্বানকারী হন মেসার্স ফোর স্টার সিন্ডিকেট। কিন্তু তাদের দরপত্র প্রস্তাবটিতে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট না থাকার অযুহাতে দরপত্র প্রস্তাবটি নন-রেসপন্সিভ করা হয়। পরবর্তীতে পুনঃদরপত্র ডাকে কর্ণফুলী গ্যাস। দ্বিতীয় বারের দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স নুর সিন্ডিকেটকে রেসপন্সিভ দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা ব্যাংক, সিডিএ এভিনিউ শাখায় রক প্রপার্টিজ নামের একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। আসামী নেছার আহমদ, কামরুন নাহার অথবা মো. আনিছ উদ্দিন আহমেদের যৌথ স্বাক্ষরে উক্ত হিসাবে লেনদেন সম্পন্ন হবে মর্মে ঘোষনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই হিসাবে অনেক সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায় দুদক।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss