টানা বর্ষণে অচল নগরী। গতকাল সোমবার দুপুরের পর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে কোনো কোনো সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পানিতে ডুবে গেছে নগরীর নিচু এলাকার বাসার নিচতলা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে বেশি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিসে ২৫৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার এবং পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ১৮৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গতকাল সোমবার সকালে বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা ১২টার পর ভারি বর্ষণ শুরু হয়। তা টানা ৩টা পর্যন্ত চলে। আজ মঙ্গলবারও ঢাকা, চট্টগ্রাম, মোংলা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে কোথাও কোথাও আজও ভারি বর্ষণ হতে পারে। একই সাথে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।’
টানা বর্ষণে নগরীর অনেক দোকান ও বাসা-বাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। পানি ওঠে সিডিএ এভিনিউ, ষোলশহর ২নং গেট ও সংলগ্ন এলাকা, মুরাদপুর, শুলকবহর, জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তা মাথা, অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা। সড়কে কমে যায় গণপরিবহনও। পানির সাথে পাল্লা দিয়ে যানজটের পাশাপাশি গাড়ি ভাড়াও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
এদিকে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় চাল-ডালের আড়ত, শুঁটকিপট্টি, তেলের দোকান, ভুষির আড়ত, মসলার বাজারের বেশ কিছু দোকানের মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুড়ির কাজ শেষ না হওয়ায় সৃষ্ট গর্তে জমে আছে পানি। এতে রিকশা ও যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। ভারি বৃষ্টিতে হেমসেন লেন এলাকায় ১ নম্বর গলির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি বলে জানা গেছে। ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের একাংশও ধসে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফ্লাইওভারগুলোতে দেখা দিয়েছে যানজট।
চান্দগাঁও আবাসিক এলাকাতেও পানি উঠে। তলিয়ে যায় আবাসিকের সব সড়ক। পানিবন্দী হয়ে পড়ে মানুষ। অধিকাংশ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে। পানি প্রবেশ করে দোকান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে দেখা দিয়েছিল গণপরিবহন সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে জবুথবু মানুষগুলোকে গাড়িতে উঠতে হিমশিম খেতে হয়। নগরের ওয়াসার মোড়, বাকলিয়ার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পাশাপাশি ফ্লাইওভারগুলোতে জমে যায় বৃষ্টির পানি।
টানা বৃষ্টিতে দামপাড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় পানি উঠে যায়। এতে ওয়াসা ভবনে প্রবেশ ও বের হতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপ্রবণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করে রেড ক্রিসেন্ট। মেডিকেল টিম গঠন করে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
সিএমপি জানায়, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর যেসব রাস্তায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে সে ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। যান চলাচল বিঘিœত হওয়া সড়কগুলো হলো, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর মোড়, শুলকবহর এলাকা, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা, অক্সিজেন মোড়, বাদশা মিয়া পেট্রোল পাম্প, জিইসি মোড় থেকে খুলশী, শিল্পকলা এলাকার মোহাম্মদ আলী রোড, ওয়ারলেস গেট, মুরগি ফার্ম, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার গুলজার মোড়, বাদুরতলা জঙ্গি শাহ মাজার মোড়, ডিসি রোড, ওয়াসা মোড়, নিউ মার্কেট থেকে আমতল, নিউ মার্কেট থেকে বিআরটিসি মোড়, জামালখান মোড়, চৌমুহনী থেকে কদমতলী মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে এক্সেস রোড, সদরঘাট মোড়, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড থেকে বন্দরটিলা, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন এলাকা।
পতেঙ্গা : পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা জানান, গতকাল দুপুরের পর বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং মোড় এলাকা কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় বিমান বন্দরমুখী সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। বিমানযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। বন্দরটিলা এলাকায় নেভি হল সড়কের উভয় পাশের শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে হালিশহর ‘এ’ ব্লকে হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। বাসিন্দারা গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। এছাড়া আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে পানিভর্তি গর্তে ভারী যানবাহন আটকে অন্যান্য যান চলাচল বিঘিœত হয়।
চস/আজহার