spot_img

৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সোমবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

শ্বাসরুদ্ধকর টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

‘এটি আমার সৌভাগ্য যে জীবদ্দশায় সবচেয়ে সেরা টেস্ট ম্যাচটি দেখছি’— অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিসবেন টেস্ট চলাকালে টুইট বার্তায় লিখেছেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ। আসলেই তাই, পুরো চারদিনই দু’দল দারুণ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। ম্যাচের পেন্ডুলামও দুলছিল দু’দিকে। একবার অস্ট্রেলিয়া তো আরেকবার মনে হচ্ছিল জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রেখে শামার জোসেফরা ৮ রানে ইতিহাস গড়ে জিতলেন।

সিরিজ শুরুর আগের ঘটনায় নজর দেওয়া যাক। যেখানে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ তোপ দেগেছিলেন ক্যারিবীয় দলটির ওপর। কারণ দলের স্কোয়াডে থাকা ৭ ক্রিকেটারের যে তখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি। সেই দলই কিনা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে হারের স্বাদ দিয়েছে। একইসঙ্গে ২০ বছর পর অজিদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টও জিতল ক্যারিবীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাদা পোশাকে জয় পেতে তাদের ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

দুই হাত দু’দিকে ছড়িয়ে শামার জোসেফের দেওয়া দৌড়ের সঙ্গে সঙ্গেই রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের ফল চলে আসে। তখন ধারাভাষ্যকক্ষে আনন্দাশ্রু ঝরছিল ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার চোখে। এমন ম্যাচ দেখে হতবিহবল ছিলেন পাশে থাকা অস্ট্রেলিয়ান অ্যাডাম গিলক্রিস্টও। এরপর কিছুটা আবেগ সামলে লারা বলে ওঠেন— ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ফের মাথা তুলে দাঁড়ানোর দিন আজ।’

ম্যাচটিতে ক্যারিবীয়দের অসাধারণ এই জয় এনে দেওয়ার আসল নায়ক জোসেফ। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় দেখা গিয়েছিল তিনি খুড়িয়ে হাঁটছেন। আগের দিন মিচেল স্টার্কের বিধ্বংসী এক ইয়র্কার তার আঙুল থেকে রক্ত ঝরিয়েছিল। ফলে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে রিটায়ার্ড হার্ট হন এই পেসার। ধারণা করা হচ্ছিল– হয়তো তার বোলিং সার্ভিস মিস করতে যাচ্ছে উইন্ডিজরা। তৃতীয় দিন তিনি শেষদিকে ফিল্ডিংয়েও নামেননি। তবে চতুর্থ দিন যা করে দেখালেন, তা অবিশ্বাস্য। টানা ১০ ওভারের স্পেলে বল করেছেন। আগুনঝরা বোলিংয়ে ৬৮ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

এ তো গেল ক্যারিবীয়দের দৃঢ়তা, অজিদের হয়ে একপ্রান্তে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছিলেন ইনিংস শুরু করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। ইনিংস শেষ হলেও তিনি অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। ম্যাচ হারের পরও তার এমন হার মানা ইনিংস হয়তো স্বস্তি জোগাবে ডিফেন্ডিং টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের। একপ্রান্তে যখন সতীর্থ ক্রিকেটাররা যাওয়া-আসার মিছিল করেছেন, অপর পাশে মাটি কামড়ে ১৪৬ বলের ইনিংস খেলেন স্মিথ। ৯টি চার ও এক ছয়ের বাউন্ডারি নিয়ে অপরাজিত এই ব্যাটার শেষ জুটিতে দুই বলের জন্য স্ট্রাইক ছেড়েছিলেন। এর ভেতরই জোসেফের প্রায় ১৪৫ গতির বলে বোল্ড জশ হ্যাজলউড। যার মধ্য দিয়ে ২০৭ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে ২ উইকেটে ৬০ রানের পর থেকে গ্যাবায় চতুর্থ দিন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্মিথের সঙ্গে আগেরদিন অপরাজিত থাকা ক্যামেরন ‍গ্রিন আজ ১১তম ওভারে শামার জোসেফের বলে বোল্ড হন। তার বিদায়ে ভাঙে দুজনের ৭১ রানের জুটি। এই অলরাউন্ডারের ব্যাটে আসে ৪২ রান। পরবর্তী ২৩ রানে স্বাগতিকরা আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায়। মিচেল স্টার্ক ছাড়া সেভাবে আর কেউ বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি স্মিথকে। স্টার্কের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান এসেছে।

তৃতীয়দিন কোনো বল না করা জোসেফ পায়ের চোট নিয়ে এদিন করেছেন ১১.৫ ওভার। ম্যাচ শেষে উর্ধ্বশ্বাসে এমন দৌড়ই তো দেওয়ার কথা তার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার শিকার ৮ উইকেট। যা তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। দুই ম্যাচে ৫৭ রানের পাশাপাশি ১৩ উইকেট শামারকে বানিয়েছে সিরিজ সেরা। বড় হার দিয়ে সিরিজ শুরু করা উইন্ডিজরা এই ম্যাচের পর ১-১ ব্যবধানে সমতা এনেছে।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss