spot_img

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শনিবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

চামড়া শিল্পের বিপর্যয়

আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় সবচেয়ে বড় খাতের একটি চামড়া শিল্প। চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু গত অর্থবছরে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এর একটি কারণ, পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য বিদেশি ক্রেতারা কিনতে চাইছেন না। তাছাড়া রিলোকেশন, অর্থ সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চামড়া শিল্পে এক ধরনের ধস নেমেছে।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু এজন্য শিল্পটিকে হতে হবে পরিবেশবান্ধব। একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও এ খাতের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো- এবার কোরবানির ঈদে চামড়ার দাম একদম কমে যাওয়া। এর মূল কারণ কিছু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট। যা বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেছেন। ব্যবসায়ীরাই এভাবে সিন্ডিকেট করে কোরবানির দিন চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলেছে।

আমরা একটি বেল্ট, কিংবা চামড়ার জুতা কিনতে গেলে হাজার টাকা লাগে। অথচ সেই চামড়াটাই এখন ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার ভেতর বিক্রি করতে পারছে না মানুষ। আবার এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যানারী মালিকরাও চামড়া কিনছে না সঠিক মূল্য দিয়ে। যারা চামড়া সংরক্ষণ করে তাদের ভাষ্য হলো, গতবছর যে চামড়া সংরক্ষণ করা আছে সেগুলো এখনও বিক্রি করতে পারেনি। নতুন করে তাই বেশি চামড়া সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী তারা পড়েছে ক্ষতির মুখে। চট্টগ্রামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী রাস্তায় চামড়া ফেলে চোখের জল নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। প্রায় দুই লাখ চামড়া এবার চট্টগ্রামে নষ্ট হয়েছে। এভাবে সারা দেশে অনেক চামড়া পচে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতি নয়, পুরো দেশের জন্য হুমকি। সেই সাথে দেশের চামড়া শিল্পের বিপর্যয়।

একসময় গার্মেন্টস খাতের পর চামড়া রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে চামড়া শিল্প সেই অবস্থানে আর নেই। দিন দিন যেন এ শিল্পের ধস নামছে। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, তাদের কাছে যেসব চামড়া মজুদ আছে, তার কোনো ক্রেতা নেই। বাইরের দেশ থেকে কোনো ক্রেতা পাওয়া যচ্ছে না। তাই তারা নতুনভাবে চামড়া মজুদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। সরকারের উচিৎ এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা এবং যে সকল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবেই চামড়া শিল্পে সুদিন ফিরবে।

লেখক: আজহার মাহমুদ, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক।

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss