spot_img

২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

আজ নায়ক জসিমের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

স্বাধীনতাযুদ্ধে অস্ত্র হাতে ছুটে গিয়েছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তি ছিনিয়ে আনতে। দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন প্রাণপণ। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অনেকেই যখন দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে শক্ত হাতে হাল ধরেন, তখন তিনিও পা রাখেন সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়ে।

শুরুটা খল অভিনেতা হিসেবে হলেও পরবর্তীকালে ঢাকাই ছবির নায়ক হয়ে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান। মূলত তার হাত ধরেই বদলে গিয়েছিলো ঢাকাই সিনেমার চালচিত্র। বহুমাত্রিক উপভোগ্য অ্যাকশন দৃশ্য উপহার দিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছিলেন বাংলার মানুষের মন।

বলছিলাম চিত্রনায়ক জসিমের কথা। আজ তার ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর ২৪ বছর পেরিয়েও এতটুকু কমেনি তার জনপ্রিয়তা। আজও দর্শক তাকে মিস করেন। তার সিনেমা দেখতে দেখতে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আহা! কী দুর্দান্ত অভিনেতা ছিলেন জসিম’।

১৯৭২ সালে ‘দেবর’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু জসিমের। এর দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ছিল তার নিজের সাজানো। নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ’র সদস্যদের নিয়ে মন ভরানো সব অ্যাকশন দৃশ্য উপহার দেন তিনি। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ ছবিতে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন জসিম।

তবে জসিমের জনপ্রিয়তার শুরু দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে। এখানে তিনি ছিলেন মূল খলনায়ক। নায়ক হিসেবে তিনি প্রথম হাজির হন সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায়। এরপর দারুণ, দুর্দান্ত, অসাধারণ একজন নায়কের পথচলার সাক্ষী হয়েছে ঢাকাই সিনেমা।

নায়ক জসিম তার সমসাময়িক প্রায় সব নায়িকার সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন। তবে শাবানার সঙ্গে তার জুটি ছিলো সুপারহিট। মজার ব্যাপার হলো জসিম-শাবানা ভাইবোন চরিত্রে অভিনয় করেও সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন। যা সচরাচর ঢাকাই ছবিতে দেখা যায় না।

নায়কসুলভ চেহারা তার ছিলো না। বেশ স্বাস্থ্যবান ছিলেন তিনি। এমন ফিগার নিয়ে এদেশে আর কাউকে নায়ক হিসেবে সুপারস্টার হতে দেখা যায়নি। কেন এত জনপ্রিয় ছিলেন জসিম? অনেকেই বলেন সবার থেকে তাকে আলাদা করেছিলো তার মন ভরানো অ্যাকশন দৃশ্যগুলো। অনেকে আবার বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে জসিম সিনেমায় হাজির হয়েছিলেন বঞ্চিত, শোষিত মানুষ ও বেকার যুবকদের প্রতিনিধি হিসেবে। যা খুব দ্রুতই তাকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলেছিলো।

জসিম দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামি’ ইত্যাদিসহ প্রায় ২ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

চিত্রনায়ক জসিম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন।

ব্যক্তিজীবনে তিনি বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতাকে। সেই সংসার খুব বেশিদিন টেকেনি। এরপর বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে চিত্রনায়িকা নাসরিনের সঙ্গে দ্বিতীয় ঘর বাঁধেন। সেই সংসারে রাতুল, সামী ও রাহুল নামে তিন পুত্রসন্তান রয়েছে জসিমের।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss