ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ভিপি নুর বলেন, কিছু দিন আগেও বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আপনি নিজেই বলেছেন- সরকারের সমালোচনা করতে বাধা নেই, দেশ ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।
‘তাই আপনার কাছে অনুরোধ- ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। দেশে শাসন প্রতিষ্ঠায় দলীয় প্রভাবমুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর করুন।’
তিনি আরও বলেন, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করুন এবং যারা হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিন। কারণ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে তার মুখ বন্ধ রাখা যায় না।
“কারণ যা জাতির পিতাই বলে গেছেন- ‘বাঙালি জাতিকে তোমরা দাবায়া রাখতে পারবা না’।”
সম্প্রতি নিজ এলাকায় হামলার শিকার হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নুর।
এ প্রসঙ্গে নুর বলেন, গত ১৪ আগস্ট চরবিশ্বাস থেকে আমার বোনের বাড়ি দশমিনা যাওয়ার পথে উলানিয়া বাজারে পটুয়াখালী-৩ এর সাংসদ এসএম শাহজাদা সাজুর নির্দেশে চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী, গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা হয়।
‘শাহিন শাহের ভাই নুরে আলম, লিটু পেদা, আব্বাস পেদা, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রণো, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ, তূর্যসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, স্টিলের পাইপ ও চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।’
সংবাদ সম্মেলনে ডাকুস ভিপি বলেন, হামলায় প্রায় ২০-২৫ জনকে আহত, ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, দুটি ডিসএলআর ক্যামেরা ও ৮৯ হাজার টাকা ছিনতাই হয়। হামলায় রবিউল, ইব্রাহিম, জাহিদ, রিয়াজ ও আমিসহ পাঁচজন গুরুতর আহত হই।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা শুধু হামলা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, আমাকে চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। ডাক্তার সিটিস্ক্যান ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার জন্য বরিশাল মেডিকেলে রেফার করলেও সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
বারবার হামলা প্রসঙ্গে নুর বলেন, এ পর্যন্ত আটবার ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছি। ভিপি হওয়ার আগে তিনবার (৩০ জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে, ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি ও ১১ মার্চ রোকেয়া হলে) হামলার শিকার হয়েছি।
‘আর ভিপি হওয়ার পর পাঁচবার (১২ মার্চ টিএসসি, ২ এপ্রিল এসএম হল, ২৫ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ২৬ মে বগুড়া ও ১৪ আগস্ট উলানিয়া) হামলার শিকার হই।’
তিনি বলেন, প্রতিবার প্রকাশ্যে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলে ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। পুলিশের নীরব ভূমিকা ছিল সন্ত্রাসীদের সহায়ক।
নুর বলেন, সর্বশেষ ১৪ আগস্টের ঘটনার দিন হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় গলাচিপা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও ওসি কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আমার আত্মীয় ও সমর্থকদের গ্রেফতারের হুমকিও দেয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নগ্ন হামলা চালালেও ওসি হামলার কথা অস্বীকার করেন।
ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর উদ্দেশে ডাকসু ভিপি বলেন, আমি আমার প্রাণনাশের শঙ্কাবোধ করছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা আমার তথা অন্যায়ের-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন।
‘আমি কোনো অন্যায়-অপরাধ করিনি। শুধু অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা বারবার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের শিকার হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি।’
চস/আজহার