spot_img

১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

হাসিনাকে বিচারের জন্য দিল্লিকে ফেরত পাঠাতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

ভারতের কাছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তার কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দ্য হিন্দুর ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়।

ঢাকায় নিজ বাসভবনে দ্য হিন্দুর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ও সংস্কারের পরিকল্পনার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি দেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনকে প্রপাগান্ডা বলে অভিহিত করেছেন।

দ্য হিন্দু : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনি ১০০ দিন পূর্ণ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি–দুটি প্রধান ইস্যুতে আপনার সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. ইউনূস : আমরা এখনও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করছি, তবে আমি বলব না যে, আমরা এখনও ‘এ’ পেয়েছি। অন্য ইস্যুতে আমি বলব, এটি এ-প্লাস। কারণ, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছি। সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। মন্দ ঋণ, ঋণ খেলাপি মিলিয়ে এটি এক উন্মত্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

বিপুল ব্যাংক একে অপরের সঙ্গে কীভাবে লেনদেন করতে হয়, গ্রাহকদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, এসব জানে না। তাই আমাদের প্রায় অকার্যকর আর্থিক ব্যবস্থা ছিল। তাই সেখান থেকে আমরা এটি তৈরি করেছি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আবার কার্যকর করছি। এটি এখনও যথার্থ পর্যায়ে নয়, তবে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়েছিল, কিন্তু এখন গত ১০০ দিন ধরে প্রতি মাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এটি আমাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করেছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি, আমরা প্রচুর বৈশ্বিক সমর্থন পেয়েছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করছে, আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে যেন বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করা যায়।

আমি যখন জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে যাই, সেখানে আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ অনেক সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা আমাদের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক সমর্থনও দিয়েছেন।

আমাদের কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে প্রস্তুত, যাতে তারা বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আটকা না পড়েন। এটি ওয়ান-স্টপ পরিষেবা, যেখানে আপনি কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। তাই আমি বলব, দেশ খুবই ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে।

দ্য হিন্দু : আপনি অবশ্যই খুব ইতিবাচক। কিন্তু আপনি কি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত? উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল এবং যেহেতু ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সমালোচনা করে অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। আপনি কতটা নিশ্চিত, নতুন মার্কিন প্রশাসন এলে আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে?

ড. ইউনূস : আমার মনে হয় না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তিনি সম্ভবত ভালোভাবে অবহিত নন। এটি একটা প্রোপাগান্ডা, যা সারা বিশ্বে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে বাস্তবতায় আসবেন, তখন তিনি অবাক হবেন। কারণ, তাকে যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, সেটি থেকে বাংলাদেশ আলাদা।

আমি মনে করি না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন মানে সবকিছু বদলে যাবে। প্রেসিডেন্টের পরিবর্তনের কারণে পররাষ্ট্র নীতি এবং দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক সাধারণত পরিবর্তন হয় না। এ ছাড়া ট্রাম্প ২.০-তে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে, এখন বাংলাদেশ ২.০, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। সুতরাং, আমরা অপেক্ষা করব, যদি মার্কিন প্রতিনিধিরা এসে আমাদের সঙ্গে বসে এবং যদি আমাদের অর্থনীতি ভালো চলছে, তারা খুব আগ্রহী হবেন। তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ক্রেতা, তাই আমাদের দিক থেকে, এটি একটি খুব ভালো সম্পর্ক, যা আমরা বছরের পর বছর ধরে গড়ে তুলেছি। আমাদের আশা এটা আরও জোরদার হবে।

দ্য হিন্দু : আপনি ট্রাম্প যা বলেছিলেন, তা প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে এটি কেবল তিনিই নন। কীভাবে হিন্দুদের টার্গেট করা হচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে হত্যা করা হচ্ছে, এমনকি ধর্ষণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সরকারও বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ড. ইউনূস : প্রধানমন্ত্রী মোদি আমার সঙ্গে প্রথম ফোনকলে (১৬ আগস্ট), তিনি ঠিক এটাই বলেছিলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে খারাপ কিছু হচ্ছে ইত্যাদি। আমি তাকে খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, এটি প্রোপাগান্ডা। অনেক সাংবাদিক এখানে আসার পরে, উত্তেজনার ঘটনা সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন এসেছে। তবে, মিডিয়াতে যেভাবে এসেছে, বিষয়টি তা নয়।

দ্য হিন্দু : তাহলে এর পেছনে কারা আছে বলে আপনি মনে করেন?

ড. ইউনূস : আমি জানি না। তবে, এই প্রচারণা সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।

দ্য হিন্দু : আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ভয় বোধ করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে আশ্বস্ত করার জন্য আপনার সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে?

ড. ইউনূস : উপদেষ্টা পরিষদের প্রত্যেক সদস্যই হয় একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি নিজেরাই ভুক্তভোগী, অথবা একজন পরিবেশ কর্মী, অথবা একজন নারী বা অন্য কোনো অধিকার কর্মী। তাই এরা সবাই অ্যাক্টিভিস্ট মানুষ। আপনি যে কথাগুলো আমার সামনে বললেন, সেগুলো বললে তারা আপনাকে প্রতিবাদ জানাবে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রত্যেকের জীবনের দিকে দেখুন।

দ্য হিন্দু : অন্যান্য উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে—মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮৪১ জন আহত হয়েছে এবং শুধু সেপ্টেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আটজন। আমরা শুনেছি, অনেক সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। কেউ কেউ বলবে, আপনার সরকার অতীতের আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে।

ড. ইউনূস : জনগণ বিচার করুক, এই সরকার কী করেছে, আর অন্য সরকার কী করেছে, তার তুলনা করুক। আমি বিতর্ক করতে যাচ্ছি না। আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অ্যাক্রিডিটেশন আইন আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু এটি প্রয়োগ করেছি এবং আপনি এটি সম্পর্কে বিতর্ক করতে পারেন যে, এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলো কিনা। আমি অবশ্য সেই আইনটি পরিবর্তন করতে চাই।

দ্য হিন্দু : আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, বিগত সরকারের সঙ্গে জড়িতদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। এটি না ঘটার জন্য আপনি কী ব্যবস্থা নিতে পারেন?

ড. ইউনূস : আমি বলব, আইনের শাসন চালু থাকুক।

দ্য হিন্দু : আপনি সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন গঠন করেছেন—সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কমিশন কেন নয়?

ড. ইউনূস : আমাদের মানবাধিকার কমিশন আছে এবং কেন সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদাভাবে করতে হবে? আমি তাদের (সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে) বলেছি, আপনারা দেশের নাগরিক। সংবিধানে সমস্ত অধিকারের কথা বলা আছে। আমরা সবাই চাই, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক এবং সংবিধান আমাদেরকে সেসব অধিকার দিয়েছে। দেখুন আমাদের সংবিধান সংস্কার কমিশনে কে আছেন, এবং কে এর প্রধান (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক শিক্ষাবিদ আলী রিয়াজ)। তারপরও আপনি যা বলছেন, তার সঙ্গে সেটি সমন্বয় করার চেষ্টা করুন, অন্যথায় এসব প্রোপাগান্ডা হয়ে দাঁড়াবে।

দ্য হিন্দু : এটা যদি ঠিক পাশের দেশ ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বাস করা হয়, তাহলে আপনার সরকার কি জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে এটা অপপ্রচার?

ড. ইউনূস : হয়তো বিশ্বকে বোঝানোর জন্য আমাদের কাছে সেই ধরনের প্রভাব বা অর্থ শক্তি নেই।

দ্য হিন্দু : আপনি এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেননি, যদিও আপনি টেলিফোনে কথা বলেছেন…

ড. ইউনূস : হ্যাঁ, এটি এখনও ঘটেনি। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাই, তখন নরেন্দ্র মোদি চলে গিয়েছিলেন। আমি বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি সেখানে ছিলেন না। বিমসটেক সম্মেলন (থাইল্যান্ডে) বাতিল হয়েছে। আমরা কেউই কমনওয়েলথ সিএইচওজিএম বৈঠকে অংশ নেইনি। আমরা শুধু প্রতিবেশী নই, ইতিহাস আমাদের একত্র করেছে। ভৌগলিক অবস্থান আমাদের একত্রিত করেছে। ভাষাগত সম্পর্ক আমাদের একত্রিত করেছে। সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করেছে। সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করেছে। প্রথম দিন থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। এটিকে লাশ হতে হবে কেন? এমনকি আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, সার্ক নেতারা নিউইয়র্কে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও বৈঠক করতে পারেন, যেন আমরা আছি সেখানে, এমন একটি বার্তা দেওয়া যায়।

দ্য হিন্দু : ভারত ও বাংলাদেশ এখন বিমসটেক, বিবিআইএন জোটে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে। তাহলে সার্ক কেন?

ড. ইউনূস : সার্ক নয় কেন? আমরা যত বেশি বন্ধু এবং সম্পর্ক তৈরি করতে পারি, তত ভালো।

দ্য হিন্দু : কারণ সার্কে ভারত ও পাকিস্তান শত্রুভাবাপন্ন এবং দুদেশের মধ্যে মতবিরোধ অনেক…

ড. ইউনূস : সার্ককে অবশ্যই সচল থাকতে হবে। দুটি দেশের জন্য পুরো জোট অদৃশ্য হয়ে যাবে, এমনটি হতে পারে না। আমরা এজেন্ডা থেকে ভারত-পাকিস্তানের ইস্যুগুলো স্থগিত রেখে রেজুলোশন পাস করতে পারি। কিন্তু আমরা সার্ককে শেষ করে দিতে পারি না।

দ্য হিন্দু : ৫ আগস্টের ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কী প্রভাব পড়ছে?

ড. ইউনূস : কেন প্রভাব পড়বে? বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতের এটি উদযাপন করা উচিত যে, বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে, যেখানে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল, অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে গুম করা হয়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোর মতো ভারতকে আমাদের তরুণদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এবং একসঙ্গে উদযাপন করা উচিত।

দ্য হিন্দু : আপনি বলেছেন, ৫ আগস্ট থেকে ভারতে হাসিনার অবস্থান দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে…

ড. ইউনূস : (সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার) অন্তত এই সময়ে ভারতে বসবাস করা, আপাতত কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললে সমস্যা। তিনি বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তা রাজনৈতিক। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা।

দ্য হিন্দু : কোন উপায়ে?

ড. ইউনূস : তার অডিও প্রচার করা হচ্ছে। তিনি (শেখ হাসিনা) তাদের (নেতাকর্মীদের) ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় বের হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের (যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট) ছবি নিয়ে। যাতে পুলিশ তাদের বাধা দিলে, তারা বলতে পারেন—বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।

দ্য হিন্দু : আপনার সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করছে, কেন সরাসরি ভারতের কাছে সরাসরি অনুরোধ করছেন না?

ড. ইউনূস : আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে সব আইনি উপায় অবলম্বন করব।

দ্য হিন্দু : আপনার সরকার এখনও প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করেনি। যদিও একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে।

ড. ইউনূস : আমি মনে করি, যে আইনগত পদক্ষেপগুলো রয়েছে, আমরা সেগুলো নিচ্ছি। তবে আমরা এখনও সেই পর্যায়ে আসিনি।

দ্য হিন্দু : ভারত চুক্তির রাজনৈতিক প্রসিকিউশনের ধারাগুলো ব্যবহার করে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে কী হবে?

ড. ইউনূস : আপনি কি বলছেন, ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করবে? হ্যাঁ, এই ধরনের ধারা আছে, কিন্তু যদি ভারত সরকার (হাসিনাকে) রাখতে সেগুলোকে ব্যবহার করে, সেখানে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা সুখের হবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার খুবই স্বল্প মেয়াদের, তাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবকিছু মিমাংসা করতে পারবে না। কিন্তু এটি আমাদের পরে আসা কোনো সরকারই ক্ষমা করবে না।

দ্য হিন্দু : আপনি কি অন্যান্য ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক মসৃণভাবে এগিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস পাচ্ছেন? সম্প্রতি আমরা জ্বালানি সংযোগ, বাণিজ্য সংযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু উদ্যোগ দেখেছি।

ড. ইউনূস : আমাদের স্বপ্ন হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি সম্পর্ক (মুক্ত চলাচল এবং বাণিজ্যের সুবিধাসহ)। সে দিকে আমরা যেতে চাই। আপনি যা উল্লেখ করেছেন, তা হলো ভাল লক্ষণ। আমরা যে দিকে যেতে চাই, আমরা যা অর্জন করতে চাই, তার থেকে আমরা অনেক দূরে, যার জন্য প্রয়োজন খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে থাকার জন্য জন্মেছি। আমরা যমজ।

দ্য হিন্দু : আপনার সরকার মেয়াদ কতটা? কখন নির্বাচন হতে পারে?

ড. ইউনূস : যখন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদেরকে স্পষ্ট করা হয়েছিল, আমরা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার হব না যে, সরকার আসবে, নির্বাচন দেবে ও ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। আমাদের বলা হয়েছিল, আমাদের প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশের সংস্কার, ২.০। আমরা বেশি দিন থাকতে চাই না। নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়, একটি পৃথক প্রক্রিয়া হিসাবে এবং সংস্কারের অন্যান্য প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলছে। প্রথমত, আমরা নির্বাচন কমিশন তৈরি করছি, যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমি বলব, নির্বাচনি ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে, কিন্তু পথের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রেলকে নির্দেশনা দিতে হবে যে, এটি কোন দিকে যাবে এবং সেজন্য আমাদের সংস্কার কমিশনে ফিরে যেতে হবে।

দ্য হিন্দু : সংস্কার করতে কয়েক বছর লাগতে পারে?

ড. ইউনূস : আমার কোনো ধারণা নেই। জনগণ একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়, তাই আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্য তৈরি করতে চেষ্টা করব।

দ্য হিন্দু : আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে?

ড. ইউনূস : এটি ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) তা ঘোষণা করেছে, সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তাই তারা ইতোমধ্যেই রায় দিয়েছে। আমরা দেশের একটি বড় দলের মতামতকে অস্বীকার করতে পারি না।

দ্য হিন্দু : তাহলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আপনার কোনো আপত্তি নেই?

ড. ইউনূস : আমি রাজনীতিবিদ নই যে, একটি দল বা অন্য দলকে বেছে নেবে। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা পূরণ করছি।

দ্য হিন্দু : আপনি বেশ কয়েক বছর আগে (২০০৭ সালে) নিজের একটি দল গঠন করতে চেষ্টা শুরু করেছিলেন…

ড. ইউনূস : এটি মাত্র ১০ সপ্তাহের জন্য ছিল। তারপরে আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং এটি বন্ধ করে দিয়েছি। অনেকে আমাকে চাপ দিয়ে বলেছিলেন, মানুষের জন্য পরিবর্তন দরকার। আমরা এমনকি পার্টির নামও ঠিক করেছিলাম, কিন্তু এটি ছিল। তারপরও সারা জীবন আমি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাওয়ার জন্য অভিযোগ শুনেছি।

দ্য হিন্দু : আপনি কি নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখেন না?

ড. ইউনূস : আমি নিজেকে কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখি না।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss