যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের সব ইউনিট। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট বন্ধের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ থাকলেও চালু ছিল ১ নম্বর ও ৩ নম্বর ইউনিট। এই দুই ইউনিট দিয়ে যা বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো সেটি জাতীয় গ্রিডে যোগ দেওয়া হতো। যান্ত্রিক ত্রুটি কারণে ৩ নম্বর ইউনিটটি গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) থেকে সোমবার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত রোববার দিবাগত রাতে সচল থাকা ১ নম্বর ইউনিটও বিকল হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটটি চালু ছিল। যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল ৫০ মেগাওয়াট। তবে গত রোববার দিবাগত রাতে ইউনিটের বয়লারের টিউব ফেটে গেলে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে এখন কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। তবে বিকল হয়ে পড়া ইউনিটগুলো সচল করার জন্য ইউনিটের প্রস্তুতকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ১ নম্বর ইউনিট সচল করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে ৩ নম্বর ইউনিটটি চালুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পর বেশ কিছু যান্ত্রিক সমস্যার কারণে সেটি চালু করতে আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে।
এদিকে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) মো. আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল সেটি বন্ধ হওয়ায় ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে। এতে অবশ্যই সমস্যা সৃষ্টি হবে। জাতীয় গ্রিড থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ এ অঞ্চলে পেতে হলে অন্য এলাকা থেকে আনতে হবে। এতে লো-ভোল্টেজসহ বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে।
উল্লেখ্য, ৫২৫ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ১ নম্বর ও ২নম্বর ইউনিট থেকে ১২৫ মেগাওয়াট করে ২৫০ মেগাওয়াট এবং ৩ নম্বর ইউনিট থেকে ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও এক সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কখনোই ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনটি ইউনিটই বিকল থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
চস/স