চট্টগ্রামের রাউজানে ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে গুলি করে হত্যার মামলায় আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল-রিভলবার, গুলি ওমোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোরে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করে জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম।
অভিযানে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, একটি রিভলবার, ৪২ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, শটগানের ১৬ রাউন্ড কার্তুজ, সাতটি খালি ম্যাগাজিন, একটি রকেট ফ্লেয়ার, দুটি রামদা, ৫০টি ইয়াবা, ২৫০ গ্রাম গাঁজা এবং নগদ ৯৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
আজ সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন—রাউজানের নোয়াপাড়া চৌধুরীহাট এলাকার আইয়ুব আলী সওদাগরের ছেলে মো. সাকিব (২০) এবং মুহাম্মদ সোবহানের ছেলে মো. শাহেদ (২৫)। আরেক জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা তিনজনই বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিম হত্যা মামলার আসামি।
জেলা পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর রাতের দিকে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের মাত্র ২০০ মিটার দূরে প্রাইভেটকারে থাকা বিএনপি কর্মী ও ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। হাকিম রাউজানের নিজ খামার থেকে নগরীর উদ্দেশে ফিরছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলযোগে এসে একদল অস্ত্রধারী তার গাড়িতে একের পর এক গুলি চালায়। গুলিতে গাড়িচালক মুহাম্মদ ইসমাইল (৩৮) আহত হন। পুলিশের ভাষ্যমতে, হাকিমের শরীরে ১০টি গুলির আঘাত পাওয়া যায় এবং গাড়িটিতে ২২টি গুলির চিহ্ন ছিল। সামনের দুটি চাকাও গুলিতে ফুটো হয়ে যায়। ঘটনার দুই দিন পর নিহতের স্ত্রী তাসফিয়া আলম হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরপর গত সপ্তাহে পুলিশ এই মামলার আরও আবদুল্লাহ খোকন, মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মুহাম্মদ মারুফ ও মুহাম্মদ সাকলাইন নামে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় একটি একনলা বন্দুক ও একটি এলজি উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের সূত্রেই সাকিব ও শাহেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানায়, কর্ণফুলী নদীর তীরের বালুমহাল দখল এবং স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই আবদুল হাকিমকে হত্যা করা হয়। তাকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনায় দুটি সন্ত্রাসী দল অংশ নেয়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।’
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, নোয়াপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই অভিযান সেই চক্রের বড় অংশ উন্মোচন করেছে।
চস/স


