spot_img

২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার
১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

লাল পতাকা দেখালেও ট্রেন থামাননি চালক

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ওপর পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন। ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ মোট সাতটি যানবাহন দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেতুর বোয়ালখালী অংশে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ট্রেনটি সেতুর উপরই আটকা পড়ে রয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘সেতুতে যানজটের কারণে আমরা লাল সিগন্যাল দিই, গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সংকেত দেন। কিন্তু ট্রেনচালক তা মানেননি।

তিনি আরও বলেন, কালুরঘাট সেতুটি ‘ডেড স্টপেজ’ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে সেতুতে উঠার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি।

রেলের গেটম্যান মো. মাহবুব বলেন, আমি নিজেই সেতুর মুখে গিয়ে লাল পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু চালক আমার সংকেত উপেক্ষা করেন। এ ঘটনায় একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস ও দুটি মোটরসাইকেল ট্রেনের নিচে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পর মুহূর্তেই একটি শিশুকে কোলে নিয়ে এক ব্যক্তি চিৎকার করতে করতে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিলেন। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, ওই ব্যক্তির স্ত্রী ট্রেনের নিচে চাপা পড়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতেও দেখা যায়, ট্রেনের নিচে পড়ে থাকা দুমড়ে যাওয়া সিএনজি ও মোটরসাইকেল এবং স্থানীয়দের উদ্ধার কাজ চালাতে।

ঘটনাস্থলে থেকে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, এখানে আমাদের চারটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ট্রেনে চাপা পড়া দুটি সিএনজি ও একটি কাভার্ড ভ্যান সরানো হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে এক শিশুকে মৃত উদ্ধার করেছি। তবে গুরুতর আহত আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আমাদের সঙ্গে এখানে সেনাবাহিনীও কাজ করছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। একজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি সেতুর মাঝামাঝি আটকে পড়ে। সামনের অংশ রেলসেতুতে এবং পেছনের অংশ রেলক্রসিংয়ের ওপর থাকায় যাত্রীরা নামতে পারছিলেন না। ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, আমরা জানি না কী হয়েছে। ট্রেন থেমে আছে অনেকক্ষণ। শুধু কান্নাকাটি আর চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। নারী ও শিশুরা আতঙ্কে কাঁপছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেতু পারাপারের সময় ট্রেনের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। এ সময় দ্রুতগতির পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসে সেতুতে উঠলে একটি অটোরিকশা সিগন্যাল না মেনে সেটিতে উঠে পড়ে। মুহূর্তেই ট্রেনটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

বোয়ালখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, “এখন পর্যন্ত এক শিশু ও এক পুরুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, আসার পর স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। ট্রেনের চালক পালিয়ে গেছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িগুলো উদ্ধারে কাজ করছেন বলে যোগ করেন ইউএনও।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধারকাজ চলমান থাকায় এখনো সব গাড়ির নিচে কেউ আটকে আছেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss