spot_img

২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বশেষ

ফেনীতে ১৪ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। গেল বছরের ভয়াবহ বন্যার এক বছর না পেরুতেই ফের বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফেনীর উত্তরাঞ্চলের জনপদ।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটা পর্যন্ত লোকালয়ে পানি ঢুকে এসব গ্রাম প্লাবিত হয় বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী নদীর বাঁধের পরশুরামের জঙ্গলঘোনা এলাকায় ২টি, অলকা এলাকায় ৩টি, শালধর এলাকায় ১টি এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুরে ১টি ভাঙন হয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় ১টি এবং ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকায় ২টি ভাঙন হয়েছে। কহুয়া নদীর পরশুরামের সাতকুচিয়া এলাকায় ২টি, বেড়াবাড়িয়ায় ১টি এবং ফুলগাজীর দৌলতপুর এলাকায় আরও ১টি ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর বাঁধ ভেঙে হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় রাতেই বহু পরিবার ঘরছাড়া হয়। অনেকে আশ্রয় নেন বাড়ির ছাদে বা উঁচু স্থানে।

পরশুরামের মধ্যম ধনীকুন্ডা এলাকার বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই পানি ঘরে ঢুকতে শুরু করে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ছাদে উঠেছি। গত বছরও বন্যায় ঘরবাড়ি সব নষ্ট হয়েছিল। এবারও একই দৃশ্য দেখতে হচ্ছে।

মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব রাঙামাটিয়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আলম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণেই বল্লামুখা বাঁধের মুখ বন্ধ করা হয়নি।সময়মতো বাঁধের এ স্থানটি বন্ধ করা হলে পানি প্রবেশ করার সুযোগ ছিল না। প্রতিবছর কিছু মানুষের দায়সারা কাজের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আসতে শুরু করেনি।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম জানান, উপজেলায় তিনটি নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে বুধবার (৯ জুলাই) উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় টানা দুই দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বুধবার ও বৃহস্পতিবারও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাত ১২টার পর থেকে মুহুরী নদীর পানি কিছুটা কমলেও উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আরও বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফুলগাজীতে ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরামে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এরইমধ্যে দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণে সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং জরুরি সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ। সূত্র: বার্তা২৪

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss